২০ এপ্রি, ২০০৬

একটি বিশেষ অসমাপ্ত সাক্ষাতকার


আশরাফুল ও রাবিদ ইমামঃ একটি বিশেষ অসমাপ্ত সাক্ষাতকার !!

চট্রগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্ট চলছে। বাইরে বইছে উতাল হাওয়া। মেঘের প্রবল গর্জন। সেই সাথে আকাশ ভেঙ্গে নেমেছে বৃস্টির অবিরাম ধারা। খেলা থেমে আছে। ড্রেসিং রুমের বারান্দায় বসে আছে আশরাফুল। উদাস মনে তাকিয়ে দেখছে মেঘলা আকাশ। উদাসী আশরাফুলকে দেখে তার পাশে গিয়ে বসলেন সাংবাদিক রাবিদ ইমাম।




রাবিদঃ আশরাফুল, একা বসে করছো কি?

আশরাফুলঃ এইতো রাবিদ ভাই, বসে বসে বৃস্টি দেখছি, মেঘলা দিন, মনটা উদাস

রাবিদঃ উদাস হবার মতো কতো কান্ড-ই তো ঘটছে-- মনতো উদাস থাকবেই। আমি তো দেখে ভাবলাম মিস্টি রোমান্টিক কোন কবিতা লিখতে বসেছো বুঝি

আশরাফুলঃ ধুর যা, কি যে বলেন। মিস্টি রোমান্টিক কবিতা আমি কি লিখবো? আমি কি লিখালিখি করি নাকি? তবে মিস্টি রোমান্টিক কিছু শট কিন্তু খেলার চেস্টা করছি আমি আজকাল।

রাবিদঃ খেলার প্রসঙ্গ-ই যখন এল, তবে এসো আলতু ফালতু কথাবার্তা রেখে তোমার একটা ফরমাল ইন্টারভিউ নেই।

আশরাফুলঃ ঠিক আছে, আলতু ফালতু কথাবার্তা সব বাদ- একদম ফরমাল ইন্টারভিউ।

রাবিদঃ ভেরি গুড। মনে রেখো, বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে তুমি এখন ইন্টারভিউ দিচ্ছো। আচ্ছা, তোমার খেলায় অবস্থা এখন কেমন? শ্রীলংকার সাথে খেলার পর থেকেই অফ ফর্ম মনে হচ্ছে।

আশরাফুলঃ আসলে সব খেলোয়াড়ের জীবনেই কখনো কখনো এরকম খারাপ সময় আসে, কিছুতেই আর কিছু হয় না। কিন্তু আমার সমস্যাটা একটু কেমন যেন অন্যরকম। আমার অফ ফর্ম বা খারাপ সময়টাই নরমাল। আর কখনো কখনো ভাল ফর্ম আসে- তখন আর কিছুতেই কিছু হয় না- পিটাইয়া সবাইরে পোতাইয়া ফালাই।

রাবিদঃ কেনিয়ার সথে কিছু হল না; আমরা তো ভাবলাম ভাল অপোনেন্ট না হলে তোমার খেলার রুচি আসে না। তাই আশা ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে তোমার খেলার রুচি আসবে, তোমার গায়েবি ফর্ম আবার নাযিল হবে বা তোমার ভাষায় পোতাইয়া ফালাইবা। কিন্তু হলো না তো?

আশরাফুলঃ আরে রাবিদ ভাই, দেখলেন কিছু হেভি একখান ঠাডা পরলো। ইস, এই ঠাডা-ডা নিয়া যদি গিলেস্পির মাথায় নিয়া ফালাইতে পারতাম!!

রাবিদঃ আশরাফুল, আশরাফুল। আলতু ফালতু অপ্রাসঙ্গিক কোন কথা না। বললাম না এটা ফরমাল ইন্টারভিউ হচ্ছে।

আশরাফুলঃ ও আচ্ছা, সরি। জানি যে এটা ফরমাল ইন্টারভিউ হচ্ছে- হঠাৎ করে কি যে হইলো, ফালতু কথা বলা শুরু করলাম।

রাবিদঃ যাই হোক, খেলার প্রসংগে আসি। অস্ট্রেলিয়ার সাথে এসব কি খেলছো?

আশরাফুলঃ আসলে এটাকিং শট খেলে তো অনেক আউট হলাম। তো এবার ভাবলাম এটাকিং বাদ দিয়া মিস্টি রোমান্টিক শট খেলি। কিন্তু দেখা গেল- অস্ট্রেলিয়ানরা খুব-ই বেরসিক। রোমান্টিকতার কোন দাম দেয় না। বর্বর পাষন্ডের মতো আমাকে খালি উপূর্যপরি আউট করে দেয়।

রাবিদঃ তা তুমি হঠাৎ করে ক্রিকেটে এই রোমান্টিকতা আমদানি করতে গেলে কেন?

আশরাফুলঃ হি হি হি, দেখেন দেখেন গ্রাউন্ডসম্যান একটা আছার খাইছে। লুঙ্গি লইয়া মাঠে পানির মইধ্যে চিতপটাং।

রাবিদঃ আশরাফুল, আশরাফুল। ফরমাল ইন্টারভিউর মাঝে আবারো বাজে কথা? এসব হচ্ছেটা কি?

আশরাফুলঃ সরি ভাই, আমি জানি যে এটা ফরমাল ইন্টারভিউ এবং দলের মান সন্মান এর সাথে জড়িত। কিন্তু কখন যে মনোযোগ হারিয়ে আবার ফালতু কথা বলার ইচ্ছা চলে এলো!!

রাবিদঃ যাই হোক, তোমার নতুন কিউট, মিস্টি, রোমান্টিক শট খেলার প্রবনতার কথা বলছিলে।

আশরাফুলঃ ও হ্যা, মডেল মোনালিসার সাথে ফটোসেশন করার সময় মোনালিসা বলেছিলো যে আমার কিউট চিকি শট গুলো ওর খুব পছন্দ। তাই প্ল্যান করেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার সাথে দুহাতে এই কিউট চিকি রোমান্টিক শট গুলো খেলবো আর মুখে রাখবো মিস্টি একটু হাসি। স্টেডিয়ামে দর্শকদের মনে হবে- খেলার মাঠ নয়, তারা যেন এসেছে কোন এক ডেটিং স্পটে।

রাবিদঃ মডেল মোনালিসা একটা কথা বললো আর তুমি অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে সেই শট খেলা শুরু করে দিলে?

আশরাফুলঃ আসলে তা নয়, আমার খালাতো বোনের ছেলে আদনান আর বাড়ীওয়ালার ছেলে রিফাতের সাথে বাসার পিছনের উঠানে যখন খেলছিলাম- বেশ সুন্দর হচ্ছিলো কিন্তূ শট গুলো। শুধু অস্ট্রেলিয়ার সাথে এসেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

রাবিদঃ আদনান-রিফাত আর অস্ট্রেলিয়া এক হলো? তুমি কোচের সামনে নেটে প্রাকটিস করেছিলে এই রোমান্টিক শট?

আশরাফুলঃ হে হে হে!! ধর ওইটারে, ভালো কইরা চুবা পানির মইধ্যে। দেখলেন রাবিদ ভাই, বলবয় গুলা বৃস্টির পানির মধ্যে একটা আরেকটারে ধইরা চুবাইতেছেভেরি ফানি।

রাবিদঃ আশরাফুল, আশরাফুল। এতো অমনোযোগী হলে হবে? কতবার মনে করিয়ে দিব যে এটা ফরমাল ইন্টারভিউ। বারবার একই ভুল করছো?

আশরাফুলঃ সরি ভাই, জানি যে এটা ফরমাল ইন্টারভিউ। দলের কথা মাথায় রেখে দায়িত্বশীল ভাবে ইন্টারভিউ দিতে হবে। হয়তো এই দায়িত্বশীলতার চাপেই সব গুলিয়ে ফেলে একটু পর পর সব ভুলে আলতু ফালতু কথার প্রসঙ্গ আনছি।

রাবিদঃ যাই হোক, বলো কি বলছিলে।

আশরাফুলঃ ও হ্যা, নেটে তো আর সব কিছু প্রাকটিস করার সময় হয়ে উঠে না। দলের সবার প্রত্যাশা আমি অবস্থা বুঝে দায়িত্ব নিয়ে খেলি, আমজনতা দর্শকদের প্রত্যাশা বুম-বুম আশরাফুল, মডেল মোনালিসার প্রত্যাশা কিউট রোমান্টিক শট। এই সেন্সিবল ক্রিকেট, বুমবুম ক্রিকেট আর কিউট রোমান্টিক- সব মিলিয়ে খেলতে গিয়ে আমি নিজেই হাবা মতিন হয়ে গেলাম। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

রাবিদঃ এবার ওয়ান-ডে সিরিজ শুরু হচ্ছে- ভালো কিছু দেখার আশা কি আমরা করতে পারি?

আশরাফুলঃ ওয়ান-ডে ম্যাচে ভালো খেলার চেস্টা...... হি হি হি, দেখেন দেখেন বৃস্টির মধ্যে খারাইয়া ডিউটি করতে গিয়া পানিতে ভিজ্যা পুলিশ গুলার কি নাকানি চুবানি অবস্থা।

রাবিদঃ আশরাফুল, আশরাফুল। বারবার একই ভুল? তুমি না কথা দিয়েছো দলের সন্মানের কথা মাথায় রেখে সিরিয়াসলি ইন্টারভিউ দিবে- অথচ প্রতিবারই সব ভুলে গিয়ে একই কাজ করছো?

আশরাফুলঃ সরি রাবিদ ভাই। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ও ফরমাল ইন্টারভিউ। আমাদের সবাইকে অত্যন্ত সতর্কভাবে ভাবনা চিন্তা করে দায়িত্বশীল কথা বলতে হবে। আশা করছি এবার থেকে ফালতু প্রসঙ্গ এড়িয়ে ভাল ভাবে কথা বলতে পারব এবং আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো।

রাবিদঃ একবার দুবার তো নয়, বারবারই একই ভুল হচ্ছে। তবে তোমার কথা শুনে এবার মনে হচ্ছে তোমার মধ্যে ম্যাচিউরিটি এসেছে ও তুমি তোমার ভুল ধরতে পেরেছ। যাই হোক, বলো, ওয়ান-ডে সিরিজ নিয়ে তোমার প্ল্যান কি?



আশরাফুলঃ কথা দিচ্ছি, ওয়ান-ডে সিরিজে পুরো পাল্টে যাবো। আসলে রোমান্টিকতার ভাত নাই। আমি আমার ন্যাচারাল খেলা খেলবো- পিটাইয়া সব বোলাররে পোতাইয়া ফালাবো। আমার মারমুখী আচরন দেখে চিনতেই পারবেন না এটা টেস্ট সিরিজের সেই নুতুপুতু আশরাফুল নাকি চট্রগ্রামের পুলিশ কমিশনার আলী আকবর খান!!

রাবিদঃ তুমি মারমুখী আলী আকবর খান হয়ে গেলে দলের হাল ধরে রেখে খেলবে কে- এটা নিয়ে টিমে কোনো আলোচনা হয়েছে?

আশরাফুলঃ ওই শালা নাম, নাম। পা পিছলাইয়া পড়বি তো। দেখেন তো কান্ড! খেলে বন্ধ তাও বৃস্টির মইধ্যে গাছের ভিজা ডলে চইড়া মাঠের দিকে তাকাইয়া আছে। এসব পাগলা দর্শক নিয়া হইছে আরেক জ্বালা। জানের মায়া নাই, খালি ক্রিকেট আর ক্রিকেট।

রাবিদঃ আশরাফুল, আশরাফুল। আবারো একই ভুল? আবারো ফালতু প্রসঙ্গ?

(হাবিবুল বাশার এসে বসলেন আশরাফুল আর রাবিদ এর সাথে)

আশরাফুলঃ সরি ভাই, অতীতের সব ভুল থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের ইন্টারভিঊ পড়ার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। আপনি দোয়া করবেন, আমি যাতে সবার কথা মনে রেখে দায়িত্বশীলতার সাথে এই ইন্টারভিউ শেষ করতে পারি।

রাবিদঃ ঠিক আছে। হাবিবুল এখন আমাদের সাথে আছে, সে তোমাকে সুন্দর ভাবে গাইড করতে পারবে যাতে তুমি ভালো ভাবে ইন্টারভিউটা দিয়ে পারো।

হাবিবুলঃ আশরাফুল, রাবিদ ভাই তোর সিরিয়াস ইন্টারভিউ নিচ্ছে আর তুই কিনা এর মধ্যে আলতু ফালতু প্রসঙ্গ আনছিস? তোর ইন্টারভিউ পড়ার জন্য মানুষ বসে থাকে- আর তুই এটা নিয়ে এমন খামখেয়ালি করিস? তুই পারবি। তুই ভাল ভাবে কথা বল- আমি তোর পাশে থেকে তোকে গাইড করব।

রাবিদঃ আচ্ছা বলছিলাম, তোমার মারমুখী খেলার সাথে মিল রেখে দলের গেম প্ল্যান কি হবে?

হাবিবুলঃ আশরাফুল, দেখ দেখ অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে সাপোর্টারগুলা বৃস্টির মধ্যে কাপড় খুলে ভিজতেছে।

আশরাফুলঃ আরে জোশ, জোশ। ওরে খাইছে, কি বড় আরেকটা ঠাডা পড়লো।

হাবিবুলঃ তুই বাজ পড়া কে ঠাডা বলিস কেন?

আশরাফুলঃ আরে রাখেন সুমন ভাই, এমন জোরে জোরে পড়তাছে- এটা ঠাটা না, রাম ঠাডা

(ইন্টারভিঊ
র কথা ভূলে হাবিবুল আর আশরাফুল অস্ট্রেলিয়ান ফ্যান, ঠাডা পড়া আর বাজ পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাদের এই কান্ড দেখে ব্জ্রাহতের মত নির্বাক হয়ে বসে রইলেন ডাকসাইটে সাংবাদিক রাবিদ ইমাম) 

আশরাফুল ও রাবিদ ইমামঃ একটি বিশেষ অসমাপ্ত সাক্ষাতকার
২০শে এপ্রিল, ২০০৬
অস্টিন, টেক্সাস 

বাংলাক্রিকেট-ডট-কম ফোরামে প্রথম প্রকাশিত