৯/১১ হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত টুইন টাওয়ারের কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলায় ব্যয়ে “গ্রাউন্ড জিরো” মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা আমেরিকার সংবাদ মাধ্যম জুড়ে অনেকটা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমেরিকার মাটিতে সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে যে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যে কারো ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের সংবিধানিক অধিকাররের কথা ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী বন্ধুদের ফেসবুকে ও বাংলাদেশের মিডিয়াতেও দেখি বিষয়টা বেশ গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে।
মসজিদ বিরোধীতাকারীদের বক্তব্য
হচ্ছে ৯/১১ হামলার স্মৃতি ঘেরা এই এলাকায় মসজিদ নির্মাণ সেই হামলায় নিহতদের
প্রতি অসন্মান দেখানোর সামিল। এছাড়াও সেই ঘটনায় যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের পরিবারেরর সংবেদনশীল অনুভূতিতেও আঘাত হানবে গ্রাউন্ড জিরোর
আশেপাশে মুসলিমদের উপাসনালয় নির্মাণের এই প্রয়াস ।
মসজিদের সমর্থনকারীদের বক্তব্য হলো
সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হলে সম্পুর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গৃহীত এই
মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পকে কোন ভাবেই বাধা দেয়া চলবে না। অনেকের আরো বক্তব্য হলো-
এটি শুধু মসজিদ নয়, এটি হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার সেখানে মসজিদের
পাশাপাশি থাকবে সুইমিং পুল, জিম ইত্যাদি এবং ধর্মবর্ণ
নির্বিশেষে এই কমিউনিটি সেন্টারের দুয়ার সবার জন্য খোলা থাকবে।
আইনগত অধিকার ও সামাজিক ন্যায়
বিচারের প্রশ্নে এই মসজিদ নির্মাণে কারো আপত্তি থাকবার কথা নয়। কিন্তু ৯/১১
হামলায় নিহতদের পরিবার ও আমেরিকার নাগরিকদের অনুভূতির সংবেদনশীলতার প্রশ্নটি
বিবেচনার দাবী রাখে। ইসলামের নাম ব্যবহার করে এই হামলা হয়েছিল। এখন যতই সকল মুসলিম
খারাপ নয় জাতীয় বাণী দেই না কেন, এই হামলার সাথে মুসলিম
ও ইসলামের নাম জড়িত থাকার বিষয়টি তো আর মুছে যায় না।
আমাদের অভিজ্ঞতা কি বলে? একাত্তরের গণহত্যা চালানো হয়েছিল ইসলামের দোহাই দিয়ে। আমাদের
রাস্ট্রনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ইসলামের আতঙ্কজনক রূপ কি
আমাদের ভাবনায় আসেনি? তাই সংবেদনশীলতার প্রশ্নটি ভাবনার
দাবী রাখে। বাংলাদেশে একুশের শহীদ মিনারের পাশে যদি কেউ উর্দু সাহিত্য পরিষদ কিংবা
জাতীয় স্মৃতি সৌধের পাশে বাংলাদেশ-পাকিস্তান মৈত্রী সংঘ বা বিহারী সাংস্কৃতিক
সংসদ নির্মাণ করতে চাইতো, সেটা কি আমাদের অনুভূতিতে আঘাত
করতো না?
মসজিদ নিয়ে এই বিতর্ক মনে করিয়ে দিল ভারতের সেই বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক ও তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার এই মসজিদ ইস্যুতে যেন জল ঘোলা করার অপচেষ্টা কেউ করতে না পারে- সেদিকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। আগামী দিন গুলোতে বাংলাদেশে যারা এই “গ্রাউন্ড জিরো” প্রসঙ্গটি আড্ডায় বা মিডিয়ার আলোচনায় আনবেন, আমেরিকার মানুষের এই সংবেদনশীলতার বিষয়টিও সহানুভুতির সাথে বিবেচনায় রাখবেন বলে আশা রাখি।
মসজিদ নিয়ে এই বিতর্ক মনে করিয়ে দিল ভারতের সেই বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক ও তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার এই মসজিদ ইস্যুতে যেন জল ঘোলা করার অপচেষ্টা কেউ করতে না পারে- সেদিকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। আগামী দিন গুলোতে বাংলাদেশে যারা এই “গ্রাউন্ড জিরো” প্রসঙ্গটি আড্ডায় বা মিডিয়ার আলোচনায় আনবেন, আমেরিকার মানুষের এই সংবেদনশীলতার বিষয়টিও সহানুভুতির সাথে বিবেচনায় রাখবেন বলে আশা রাখি।
আমেরিকার বাবরী মসজিদ
১৫ই আগস্ট, ২০১০
নক্সভিল, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত