১৯ আগ, ২০১৩

বালের রাজনীতি

রাজনীতির ময়দানে চুলোচুলি শুরু হয়েছে। সরকারী দল ও বিরোধী দলের মধ্যে গত দুইদিন ধরে চলছে চুল বিষয়ক তুমুল বাক্য বিনিময়। রাজপথে আমরা দুই দলের নেতা কর্মীদের আগে চুল ধরে টানাটানি করতে দেখেছি। এবার দেখছি রাজনৈতিক সংলাপেও চুল উড়ে বেড়াচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৮ই আগস্ট ২০১৩ তারিখে। গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা  বলেন, "নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না"

পরদিন ১৯শে আগস্ট এর জবাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে  আয়োজিত এক জনসভায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, "আন্দোলনের বাতাসে চুল উড়ে যাবে। জনগণের আন্দোলনের বাতাসে চুল তো থাকবেই না, সব চুল এলোমেলো হয়ে যাবে"।

এবার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হলেন সরকারের এক মন্ত্রী। ১৯শে আগস্টেই শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, যারা পরচুলা দিয়ে চুল ফুলিয়ে মানুষকে দেখায় তাদের চুলই উড়ে যাবে।


চুল বা বাল কে কেন্দ্র করে চলমান এই রাজনীতিকেই বোধ হয় বলে বালের রাজনীতি

১৬ আগ, ২০১৩

মুজিব-মোশতাক দ্বন্দ্বের ঐতিহাসিক যোগসূত্র পর্ব-১

খন্দকার মোশতাক আহমেদ...১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত দেশীয় ক্রীড়নকদের অন্যতম।  বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনায় দেশীয় যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই  ১৯৭৫ পূর্ববর্তী বছর গুলোতে এসে এই ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত হলেও, খন্দকার মোশতাক এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধুর প্রতি মোশতাকের বৈরিতার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে একের পর এক সাজিয়ে নিয়ে মুজিব-মোশতাক দ্বন্দ্বের ঐতিহাসিক যোগসূত্রগুলো তুলে ধরাই এই লেখার উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামের এই চরিত্রটি রাতের অন্ধকারে ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা কোন চরিত্র নয়। এই রাজনৈতিক সত্ত্বাটি তিলে তিলে গড়ে উঠেছে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ-পরিক্রমার মধ্য দিয়ে। এই প্রক্রিয়ার শুরুতে তিনি ছিলেন একজন দলীয় নেতা। দলের ভেতরে নিজের অবস্থান তৈরি ও টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই দলীয় নেতা শেখ মুজিব কে এগিয়ে আসতে হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই তাকে নিজের মত বা দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত অবস্থানে থাকা দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বা দমিয়ে রেখে এগুতে হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের অবিভক্ত বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী হিসাবে একই সময়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে এমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তরুণ শেখ মুজিব ও খন্দকার মোশতাক। রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শেখ মুজিবের কাছে পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন খন্দকার মোশতাক। দলীয় রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়ে খন্দকার মোশতাক যে তার প্রতি অন্তরে এক  তীব্র তিক্ততা ধারণ করেন, তা বঙ্গবন্ধু ভালোভাবেই জানতেন। একারণেই হয়তো স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোশতাককে সরকার ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিলেও পারিবারিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুকে বলতে শোনা যায়, আমাকে যদি কেউ পেছন থেকে ছুরি মারে, তা মোশতাকই মারবে

শেখ মুজিবুর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদের রাজনৈতিক জীবনের শুরু মোটামুটি একই সময়ে। ত্রিশের দশকের শেষ দিকে মুসলিম ছাত্র লীগের সংগঠক হিসাবে পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় সহকর্মী হিসাবে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিলেও তাদের মাঝে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল এবং এই মতপার্থক্যের সূত্রপাত ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের মাঝে বিদ্যমান উপদলীয় কোন্দলের মধ্য দিয়ে।  

১৯৪২ সালের দিকে তরুণ শেখ মুজিব যখন গোপালগঞ্জ থেকে পড়াশোনা করতে কলকাতা আসেন, সেই সময়ে ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ছিল দুইটি প্রধান ধারা: একদিকে খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আকরাম খাঁ এর নেতৃত্বে দক্ষিণ-পন্থী গ্রুপ এবং অন্যদিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বে মধ্যপন্থী গ্রুপ। খাজা নাজিমুদ্দিন এবং সোহরাওয়ার্দী পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতেন। আর মুসলিম লীগ দলের ভেতরে নাজিমুদ্দিনের সমর্থিত অংশ থেকে মাওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন সভাপতি আর   সোহরাওয়ার্দী সমর্থিত অংশ থেকে আবুল হাশিম ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।

কলকাতায় আসার আগে থেকেই শেখ মুজিব ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর তুমুল ভক্ত। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন শ্রম-মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ  সফরে এসে শহরের মিশন স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।  বালক মুজিব তখন সেই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল পরিদর্শন শেষে সোহরাওয়ার্দী হাটতে হাটতে লঞ্চ ঘাটের দিকে এগুচ্ছিলেন, তখন অন্য অনেকের মতো শেখ মুজিবও মন্ত্রী মহোদয়কে এগিয়ে দিতে সাথে সাথে হাটছিলেন। তখনই সোহরাওয়ার্দী বালক মুজিবের সাথে প্রথম কথা বলেন এবং তার নাম ঠিকানা লিখে নেন। ঝানু রাজনৈতিক নেতা সোহরাওয়ার্দী...সেই স্বল্প পরিচয়েই  যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন। আধুনিক কালে  কোন ইন্টার্ভিউ  কিংবা সভা সমাবেশে পরিচয়ের পর নেটওয়ার্কিং এর উদ্দেশ্যে যেমন থ্যাঙ্ক ইউ নোট পাঠানোর রেওয়াজ চালু আছে, সেই ১৯৩৮ সালেই বালক মুজিবের সাথে সাক্ষাতের পর কলকাতায় ফিরে গিয়েই সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবকে থ্যাঙ্ক ইউ নোট পাঠিয়ে দেন! এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৯ সালে স্কুল ছুটিতে কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে মুজিব সোহরাওয়ার্দীর সাথে দেখা করেন। সেই থেকেই সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শেখ মুজিবের বাল্যপ্রেমের সূচনা। ফলে মেট্রিক পাশের পর কলকাতায় যাবার পর শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম অংশের সাথে যোগ দিয়ে গিয়ে পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে  ঝাঁপিয়ে পড়েন। সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শেখ মুজিবের এই ভক্তি তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক জীবন জুড়েই বজায় ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীই ছিলেন শেখ মুজিবের একক রাজনৈতিক গুরু। বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষায়, আমি ছিলাম শহীদ সাহেবের ভক্ত। শেখ মুজিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে শহীদ সাহেব বলে ডাকতেন।   শহীদ সাহেবের প্রতি তার এই গুরুভক্তি তিনি প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিতে কখনো দ্বিধা করতেন না। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক সরকার গঠনের পর মন্ত্রীসভার সদস্য হিসাবে তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের সাথে দেখা করতে গেলে গোলাম মোহাম্মদ শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, লোক বলে আপনি নাকি কমিউনিস্ট। একথা কি সত্য?। উত্তরে শেখ মুজিব তার  সোহরাওয়ার্দী-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দর্শন জানিয়ে দিয়ে বলেন, যদি শহীদ সাহেব কমিউনিস্ট হন, তাহলে আমিও কমিউনিস্ট। আর যদি শহীদ সাহেব অন্য কিছু হন, তাহলে আমিও তাই

মুসলিম লীগের রাজনীতিতে খন্দকার মোশতাক এবং শেখ মুজিব দুজনেই ছিলেন সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কর্মী। ১৯৪৩ সালে আবুল হাশিম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েই দলের ভেতরে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। আবুল হাশিম ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামী দার্শনিক। এই সময়ের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের বাবা তিনি। আবুল হাশিম বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ভেতরে তার ইসলামী সাম্যবাদের  নতুন আর্থ-রাজনৈতিক মেনিফেস্টো দিয়ে তরুণদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগান। সেই সময়ের তরুণ মুসলিম লীগ কর্মীদের ভেতর তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। তিনি কলকাতা মুসলিম লীগ অফিসে লাইব্রেরী স্থাপন করে ও কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করে দলে হোল-টাইম ওয়ার্কার বা সার্বক্ষণিক কর্মী প্রথা চালু করলেন। তরুণ শেখ মুজিব কলকাতা মুসলিম লীগ অফিসে হোল-টাইম ওয়ার্কার হয়ে গেলেন। এদিকে আবুল হাশিম পূর্ববঙ্গের জন্য ঢাকার ১৫০ মোগলটুলিতে এক তিন তলা বাড়িতে কলকাতার মতোই অফিস স্থাপন করে সেখানেও হোল-টাইম ওয়ার্কার প্রথা চালু করলেন। শামসুল হক (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক) ঢাকা অফিসের দায়িত্ব নেন এবং তার নেতৃত্বে অন্য আরও অনেকের মতো খন্দকার মোশতাক ঢাকাতে হোল-টাইম ওয়ার্কারে পরিণত হন। এই সময় আবুল হাশিম কলকাতা ও ঢাকাতে দলের এই সার্বক্ষণিক কর্মীদের তার  ইসলামী সাম্যবাদের নতুন আর্থ-রাজনৈতিক মেনিফেস্টোর উপরে ক্লাসের আয়োজন করে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতেন। এভাবে শামসুল হক, খন্দকার মোশতাক ও শেখ মুজিবের মতো তরুণেরা আবুল হাশিমের কাছে দীক্ষা নিতে থাকেন। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে অনেক রাত অবধি মাঝে মাঝেই চলতো এই আলোচনা। তবে এই ক্লাসে শেখ মুজিবের মনোযোগ ছিল কম। তার নিজের ভাষায়, আমার পক্ষে ধৈর্য ধরে বসে থাকা কষ্টকর। তাই কিছু সময় যোগদান করেই পিছন দিক দিয়ে ভাগতাম। শেখ মুজিব ক্লাসের অন্যদের বলতেন, তোমরা পণ্ডিত হও। আমার অন্য অনেক কাজ আছে,। এভাবেই শামসুল হক ও খন্দকার মোশাতাক  পণ্ডিত হতে হতে আবুল হাশিমের একনিষ্ঠ শিষ্যে পরিণত হন।  শেখ মুজিবের আসল আনুগত্য ছিল সোহরাওয়ার্দীর প্রতি। আবুল হাশিমের ক্লাসের চাইতে রাতের বেলা শহীদ সাহেব এর কাছে গিয়ে রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা নেওয়াতেই তার আগ্রহ ছিল বেশী। অন্যেরা যখন আবুল হাশিমের শিষ্যত্ব বরণ করে নিচ্ছিলেন, সেই সময়েই শেখ মুজিবের কাছে আবুল হাশিমের মূল্যায়ন ছিল এই রকম: আমি ছিলাম শহীদ সাহেবের ভক্ত। হাশিম সাহেব শহীদ সাহেবের ভক্ত ছিলেন বলে আমিও তাকে শ্রদ্ধা করতাম, তাঁর হুকুম মানতাম। হাশিম সাহেবও শহীদ সাহেবের হুকুম ছাড়া কিছু করতেন না। অর্থাৎ, আবুল হাশিমকে তিনি তাঁর নেতা মানেননি। যতদিন আবুল হাশিম সোহরাওয়ার্দীর প্রতি অনুগত ছিলেন, ঠিক ততদিনই শেখ মুজিবের কাছে তার গুরুত্ব ছিল। আসলে সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শেখ মুজিবের ভক্তি এতই গভীর ছিল যে  সোহরাওয়ার্দীর দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই তিনি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কার কথা মানা যাবে আর কার কথা মানা যাবে না তা নির্ধারণ করতেন। কেউ সোহরাওয়ার্দীর বন্ধু হলে, তরুণ মুজিব তাকে বন্ধু হিসাবে মেনে নিতেন, আর কেউ সোহরাওয়ার্দীর শত্রু হলে, মুজিবও তাকে শত্রু বলে গণ্য করতেন।  ফলে সে সময়ের অনেক তরুণের মতো খন্দকার মোশতাক আবুল হাশিমের ইসলাম-কেন্দ্রিক দর্শনের প্রতি আনুগত্য গ্রহণ করলেও, শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দীর পাশ্চাত্য-মুখী মধ্যপন্থী ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকেন।

সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের এই যুগলবন্দী টিকে থাকে ১৯৪৬ সালের শেষ দিক পর্যন্ত। এই সময়ে মুসলিম লীগের সভাপতি পদ থেকে মাওলানা আকরাম খাঁ পদত্যাগ করেন। আবুল হাশিম তখন মুসলিম লীগের সভাপতি পদটি গ্রহণ করতে চাইলেন। আবুল হাশিমের এই উদ্যোগে বাধ সাধেন সোহরাওয়ার্দী। মাওলানা আকরাম খাঁ প্রতিপক্ষ খাজা নাজিমুদ্দিন গ্রুপের লোক হলেও দলের সর্বস্তরে ছিল তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। এছাড়া সেসময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আজাদ এর সম্পাদক হিসাবেও দেশব্যাপী তার বহুল পরিচিতি ছিল। বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষায়, মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবকে আমরা সকলেই শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতাম। তার বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই বলার ছিল না। সোহরাওয়ার্দী মাওলানা আকরাম খাঁকে অনুরোধ করে তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নেন। ফলে আবুল হাশিম সোহরাওয়ার্দীর উপর দারুণ ক্ষিপ্ত হন। তিনি এতটাই চটেছিলেন যে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতা ছেড়ে বর্ধমানে চলে যান। সেই থেকে আবুল হাশিমের সাথে সোহরাওয়ার্দীর দ্বন্দ্বের শুরু। ফলে সোহরাওয়ার্দী-কেন্দ্রিক অবস্থানের কারণে শেখ মুজিবও আবুল হাশিমকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখতে শুরু করেন। তার ভাষায়, আমাদের অনেকেরই মোহ তাঁর (আবুল হাশিম) উপর থেকে ছুটে গিয়েছিলো। ফলে শামসুল হক ও খন্দকার মোশতাকের মতো যারা আবুল হাশিমের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন তাদের সাথে শেখ মুজিবের দূরত্ব তৈরির  প্রেক্ষাপটের সূচনা ঘটে এই সময়েই। (চলবে)


(বি: দ্র:  সকল তথ্যসূত্র শেষ পর্বে যোগ করা হবে)