২৩ জুল, ২০১৩

একটু টিপে দিয়েছি

হুমায়ূন আহমেদ এর কোথাও কেউ নেই নাটকের একটি দৃশ্য। এক রিক্সাওয়ালাকে কেন অযথা মারধর করা হলো এই প্রশ্নের জবাবে কৈফিয়ত দিতে গিয়ে বাকের ভাইয়ের উত্তর ছিলোঃ মারলাম কোথায়, একটু টিপে দিয়েছি





সাংবাদিক পেটানোর ঘটনা নিয়ে সাংসদ গোলাম মাওলা রনির নানা নাটকীয় কাণ্ডকারখানা দেখে হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাইয়ের সেই সংলাপের কথা মনে পড়ে গেল।

২২ জুল, ২০১৩

১৯৭৬-এর রাজনৈতিক দলবিধিতে ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা

১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার এক সপ্তাহ পরই জিয়া দেশে রাজনীতির ময়দান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন।  তাহেরের ফাঁসির ঠিক ৭ দিন পর ২৮শে জুলাই ১৯৭৬ তারিখে জারি করা হল রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬। এই সামরিক আইন বিধির আওতায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ঘরোয়া পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ করে দেয়া হল। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ও অন্য নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের ফলে জাসদ চলে গিয়েছিলো আন্ডারগ্রাউন্ডে। বাকশালে একীভূত হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে মুজিব হত্যা, জেল হত্যা ও মূল নেতৃত্বের কারাবরণ বা আত্মগোপনের ফলে আওয়ামী লীগও তখন নিস্তব্ধ। কিন্তু ১৯৭৬ এর রাজনৈতিক দল বিধির আওতায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ দুটি দলই নতুন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করার উদ্যোগ নিলো। জিয়ার সামনে তখন চ্যালেঞ্জ......নিহত শেখ মুজিবের ইমেজ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ও ফাঁসিতে ঝোলানো তাহেরের স্মৃতি সামনে রাখে জাসদ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ব্যক্তি ইমেজ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য  জিয়া রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬ জারীর মাত্র সাতদিনের মাথাতেই এই বিধিতে  এক অভিনব সংশোধনী নিয়ে আসলেন। ৪ঠা আগস্ট ১৯৭৬ তারিখে রাজনৈতিক দল বিধি (সংশোধিত সামরিক আইন নং ২৫ ) জারী করে বলা হল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তিপূজা প্রকাশ করা হলে তা আইনবর্হিভূত বলে গণ্য হবে। ১৯৭৮ সালের মধ্যেই জিয়া নিজে দেশব্যাপী ব্যাপক ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। জিয়ার নিজের ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের সুযোগ এসে যাওয়ায় বিএনপি গঠনের প্রাক্কালে ১৯৭৮ সালের ১লা মে জিয়া সমস্ত সংশোধনী-সমেত রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।



রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের উপর ১৯৭৬ এর রাজনৈতিক দল-বিধির সেই নিষেধাজ্ঞা টিকিয়ে রাখা ও তার বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আজ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনীতির ধরণ কি হতো সে এক কৌতুহলউদ্দীপক প্রশ্ন বটে!   

২১ জুল, ২০১৩

খুনিদের কণ্ঠস্বর

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের দিনের শুরু হয়েছিলো রেডিওতে আমি মেজর ডালিম বলছি ঘোষণা শুনে। সেদিন রেডিওতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার এই ঘোষণার কথা পত্রিকায় আর বইয়ের পাতায় পড়ে এসেছি। আজ সুযোগ হল সেই রক্তস্নাত সকালে রেডিওতে প্রচারিত ঘোষণাগুলোর কিছু অংশ শুনে দেখবার।

 
অডিও ক্লিপটি জুড়ে ঘুরে ফিরে বেজে উঠছিল খুনি মেজর ডালিমের কণ্ঠ। তার দাম্ভিক কণ্ঠ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও তার সরকারকে উৎখাত করার ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে যাচ্ছিল: বাংলাদেশ পুলিশ, বিডিআর, ও রক্ষীবাহিনীর সিপাহী ভাইবোনেরা, আপনারা সবাই সেনাবাহিনীর সাথে যোগদান ও সহযোগিতা করুন। যাহারা অসহযোগিতা করিবেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের চরমদন্ড দেয়া হইবে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। মেজর ডালিম জনগণকে আরও জানিয়ে চলেছিলেন: আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, কোন অসুবিধা নেই।

ফারুক হোসেন নামের বাংলাদেশ বেতারের একজন ঘোষক ও সংবাদ সেদিনের ঘোষণাগুলো সঞ্চালন করছিলেন। তিনি একটু পরপর বুলেটিন পাঠ করে জানিয়ে যাচ্ছিলেন: শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। জানিয়ে দেয়া হচ্ছিলো...সারা বাংলাদেশে সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারী করা হইয়াছে।

মাঝে জাতীয় সংগীতের সুরে বাজিয়ে জানানো হয় এখন বক্তব্য রাখবেন, আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ। প্রেসিডেন্ট সাহেব জাতিকে আসসালামাইকুম জানিয়ে বলেন, এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আজ দেশ এবং দেশবাসীর বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে পরম করুণাময় আল্লাহ-তায়ালা ও দেশবাসীর উপর নির্ভর করে  তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তিনি আরও জানান, দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী বীরের মতো তার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে।

দিনভর বাংলাদেশ বেতারের সব বুলেটিন ও সংবাদ খন্দকার মোশতাকের সেই ভাষণের উপর ভিত্তি করে জানিয়ে চলে: খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে আজ ভোরে সামরিক বাহিনী দেশের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক আহমেদ নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। সব দেশপ্রেমিক নাগরিককে নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বিশেষকরে রক্ষীবাহিনী, বিডিআর এবং পুলিশ বাহিনীকে  নিকটস্থ সামরিক কমান্ডের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। নতুন সরকার সারা বিশ্বের প্রতি তাকে স্বীকৃতি দানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ছিল শুক্রবার। সেদিন সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ জারী করে রেডিওতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যাতে কেউ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিজ নিজ বাড়ী ঘর থেকে বের না হয়। তবে দুপুরের আগে আগে সংবাদে জানানো হয়, জনগণ যাতে জুম্মার নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য রাষ্ট্রপতি আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন শিথিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর মাঝে রেডিওতে হুবহু একি বক্তব্য এক এক করে পাঠ করে সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, নৌ বাহিনী প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ারভাইস মার্শাল একে খন্দকারসহ পুলিশ ও বিডিআর প্রধানেরা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাদের সবার দুই বাক্যের সেই ভাষণ ছিল এরকম:  দেশের নতুন সরকারের প্রতি আমরা আমাদের অবিচল আস্থা ও আনুগত্য জ্ঞাপন করছি। আমাদের সকল পর্যায়ের অফিসার ও জওয়ানদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সুশৃঙ্খলভাবে নিজ নিজ কমান্ডারদের নির্দেশ অনুযায়ী স্ব স্ব দায়িত্বে নিযুক্ত থাকার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি।

শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে ......এই নির্মম বাক্যটি কি অবলীলায় সবাই মিলে সেই জাতীয় প্রচার মাধ্যমে উচ্চারণ করে যাচ্ছিলেন!!

২০ জুল, ২০১৩

অযোগ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য

পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে কিংবা পালিয়ে গিয়ে যেসব বাঙ্গালী সেনাসদস্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তারা সকলেই সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের শপথ বরখেলাপ করেছেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে তারা যতই বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দিক না কেন, স্বাধীনতার পরে তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকুরীতে ফিরিয়ে আনা ঠিক হয়নি। কারণ শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের শপথ ভঙ্গের দায়ে এই সকল মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের অযোগ্য হয়ে গেছেন।


গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রন্থে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন মওদুদ আহমেদ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে আনুগত্য বজায় না রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কারণে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফিরে আসার অযোগ্য। তার মানে কি এই যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে বাঙ্গালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে তারা সেনাবাহিনীতে ফিরে আসার যোগ্য থাকতেন?

গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ বইয়ের পৃষ্ঠা ১০-এ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে নানা বিশৃঙ্খলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মওদুদ আহমেদ লিখেছেন:

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যে সমস্ত ব্যাটালিয়ন স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল কেন্দ্রগুলো গঠন করে তারা সবাই ছিল মূলত পলাতক। সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবার সময় আনুগত্যের একটি শপথ নিলেও তারা সেই শপথ ভেঙ্গে মূল সেনাবাহিনীর কমান্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছিল। যুদ্ধকালে যত বীরত্ব ও সাহসিকতাই তারা প্রদর্শন করে থাকুক না কেন, অপর একটি সুশৃঙ্খল চিরায়ত সেনাবাহিনীর সদস্য হবার জন্য আনুগত্যের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, সে যোগ্যতা হারিয়ে ফেলায় ইতোমধ্যেই তারা হয়ে পড়েছিলো অযোগ্য। বীরত্ব ও ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের বেসামরিক প্রশাসন, এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও অঙ্গীভূত করা যেতো, কিন্তু কোনভাবেই তাদের সুশৃঙ্খল একটি সেনাবাহিনীর ধাপক্রমিক পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা উচিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

১৫ জুল, ২০১৩

গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে


পঞ্চগড় থেকে ঘুরে এলাম। পঞ্চগড়ের ভেতরগড়-অমরখানা-জগদলহাট-বেরুবাড়ি-সোনারবান-নালাগঞ্জ-সর্দারপাড়া-মহারাজদীঘি-তলমা নদীর পাড়...এসব এলাকায় একাত্তরের এক গেরিলা দলের সাথে কেটেছে আমার গত কয়েকটি রাত। মুক্তিযুদ্ধকে এভাবে এত কাছ থেকে দেখার দেখার, মুক্তিযুদ্ধের গণ-চরিত্রকে এভাবে অনুভব করার সুযোগ এর আগে আমি আর কখনো পাইনি। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুব আলমের গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে নামের প্রায় ১২০০ পাতার বইটি আমাকে এই অনন্য অভিজ্ঞতার মধ্যে নিয়ে গেছে। আমার সীমিত পড়াশোনায় এটি মুক্তিযুদ্ধের উপর এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠতম বই। নির্দ্বিধায় আবারো বলছি, মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার পড়া শ্রেষ্ঠতম বই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মজুরসহ শ্রেণীগোত্র নির্বিশেষে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে গণযুদ্ধের রূপ নিয়েছিলো, তার বর্ণনা এই রকম সামান্য কিছু বাক্যেই শেষ। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে-ইতিহাসে আর বাকি সবই সামরিক বাহিনীর তৎপরতা আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কর্মকাণ্ডের আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ। সাহিত্য-প্রকাশ থেকে প্রকাশিত মাহবুব আলমের গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে বইটি এই সকল সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের অংশগহণের ছবিটি দারুণ ভাবে তুলে এনেছে। সেই ১৯৯১ সালে প্রকাশিত বইটি, এই রত্নটি কিভাবে এতকাল আমার চোখের আড়ালে রয়ে গেল...সেটাই এক বিস্ময়।

১৯৭১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের ছাত্র রংপুরের ছেলে মাহবুব আলম। যুদ্ধের সময় এক গেরিলা দলের কমান্ডার হিসাবে তাকে সপ্তাহে দুইবার তার দলে তৎপরতার রিপোর্ট করতে হতো। সেই রিপোর্টিংয়ের জন্য তার নোটবুকে তিনি কয়েক লাইনে টুকে রাখতেন প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা। এরকম তিনটি ফিল্ড বুকের উপর ভিত্তি করে স্মৃতি থেকে তিনি তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের এর অবিশ্বাস্য চিত্র...যার পুরোটা জুড়েই আছে একবারে সাধারণ মানুষের শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষের সম্মিলিত যুদ্ধের কথা, যুদ্ধে গ্রামের গণ-মানুষের অংশগ্রহণের পুঙ্খানুপুঙ্খ জীবন-ঘনিষ্ঠ বর্ণনা।


আমাদের চেনাজানা বন্ধু মহলের সবার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ...এখনো যারা পড়ে দেখেননি...অবশ্যই পড়ে নিবেন। এখুনি। দেশে বইয়ের দোকানে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। বিদেশে যাদের সহজে বাংলা বই হাতে পাবার সুযোগ নেই, ইন্টারনেটে খুঁজলে তারাও পিডিএফ আকারে পেয়ে যাবেন। মুক্তিযুদ্ধকে এক নতুন ভাবে অনুভবের সুযোগ এনে দিবে এই বইটি। পাতার পর পাতা পড়তে পড়তে দেখবেন পিন্টু-মতিয়ার-মধুসুদন-জহিরুল-অহিদার-গোলাম গউস-হাসান-আক্কাস-একরামুল-মজিব-দুলু-মন্টু-বাবলু-মুকতু মিয়া-জোনাব আলী-হাসান মাঝি এসব গণমানুষের চরিত্রগুলো অজান্তেই কখন যেন কত আপন হয়ে যায়। কর্নেল-ক্যাপ্টেন-মেজরদের মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি আপনি এসব গন-যোদ্ধাদের মধ্যদিয়ে দেখতে পাবেন এক জনযুদ্ধের রূপ।

১৩ জুল, ২০১৩

সরকারী চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে একটি প্রশ্ন: একজন মুক্তিযোদ্ধা পিতা বা মাতার সংসারে যদি ৫ জন ছেলে মেয়ে থাকে, সেই ৫ জনের প্রত্যেকেই কি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা পাবে? একটি পরিবারে কতজনকে পুনর্বাসিত করলে একটি পরিবার পুনর্বাসিত হয়?

সরকারী চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুনর্বাসন। সেই উদ্দেশ্যে বর্তমানে সরকারী চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য সংরক্ষিত আছে ৩০ ভাগ কোটা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুনর্বাসন জরুরী। তবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ কতটা অযৌক্তিক? সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এই মুক্তিযোদ্ধাদের অংশ শতকরা দশমিক এক দুই ভাগ (০.১২ ভাগ)। অর্থাৎ চাকুরীতে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা জনসংখ্যার অনুপাতে প্রায় ২৪০ গুন বেশী।


এই কোটার সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা দরকার। একইভাবে দরকার এক পরিবারে সর্বোচ্চ কতজন কোটার সুবিধা পাবে তার সীমা নির্ধারণ।

পার্মানেন্ট ডিলে

Permanent Delay কথাটার প্রেমে পড়ে গেলাম। এই শব্দ-যুগলের সৌন্দর্য Temporarily Killed শব্দ-যুগলকেও হার মানায়!

সব রিপাবলিকান সিনেটর এক যৌথ চিঠি পাঠিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে হেলথ কেয়ার রিফর্ম অ্যাক্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে Permanently Delay করার আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেস ও সিনেটে হেলথ কেয়ার রিফর্ম বিলটির পাস হওয়া ঠেকানো যায়নি। এরপর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে আইনটিকে অসাংবিধানিক হিসাবে বাতিল করার চেষ্টাও সফল হয়নি। শেষে এই আইনটি প্রত্যাহার করার নির্বাচনী মেনিফেস্টো নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন করেও জুটেছে ব্যর্থতা। তাই এখন সিনেট রিপাবলিকানদের এখন নতুন আবদার, ঠিক আছে, মেনে নিলাম আইন, তবে এর বাস্তবায়নে চাই Permanent Delay


এখন কায়দা করে এই নিউজটা দেশে মওদুদ আহমেদের হাতে ধরিয়ে দিতে পারলে দেখা যাবে বিএনপিও এর প্রয়োগ শুরু করেছে... ঠিক আছে, মেনে নিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের আইন, তবে বাস্তবায়নে চাই Permanent Delayআফটার অল, আদালতের রায়ে দুই মেয়াদের বা ১০ বছরের Delay করার কথা বলা ছিল।

মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েই চলেছে!

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে এই পর্যন্ত মোট পাঁচ বার। এই হলো গণনার ফলাফল:
১৯৭৩ সাল: ৬৯,০০০ জন
১৯৮৬ সাল: ১,০২,৪৫৮ জন
১৯৯৬ সাল: ১, ৫৪, ০০০ জন
২০০১ সাল: ১, ৯৬, ০০০০ জন
২০০৯ সাল: ২, ০৬,০০০ জন

যতই দিন যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েই চলেছে!