২০ ফেব, ২০১৬

ক্লান্ত ‘বাংলাভাষা’

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর সংগঠন ও বাঙ্গালী বই থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি:

আজও একুশে ফেব্রুয়ারির রাত তিনটায় পাড়ার সাহিত্য-প্রেমিকদের চড়াগলার ডাকাডাকি শুরু হয়ে যায়। শুনতে পাই উৎকণ্ঠিত কণ্ঠের উদ্বুদ্ধ আহ্বান: ভাইসব, আপনাদের ভেতর কি বাংলাভাষার প্রতি ভালোবাসা নাই? বাংলা সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা নাই? আপনারা এখনো ঘুমান? আপনারা উঠুন! শহীদ মিনারে ফুল দেবার মিছিলে যোগ দিন। তাদের কণ্ঠে একই সঙ্গে বেদনা ও ধমক। ডাকাডাকির ফলে চারপাশের ঘরবাড়ি থেকে সবাই এসে সমবেত হয়, শুরু হয় তিন-চার ঘণ্টার সুদীর্ঘ মিছিল; তারপর বহু মিছিলের পেছনে হেঁটে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একসময় পাওয়া যায় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য দিতে পারার জ্যোতির্ময় মুহূর্ত। ফেব্রুয়ারিতে শীত তখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। কাজেই দীর্ঘপথ খালিপায়ে হেঁটে পুষ্পার্ঘ্য দিতে দিতেই বাংলাভাষার অবস্থা মোটামুটি করুণ হয়ে ওঠে। পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে বাংলা একাডেমীর বইমেলায় ঘণ্টা-দুই হাঁটাহাঁটির পর বাংলাভাষার গলা আরও শুকিয়ে যায়। এরপর একটা-দুটোর দিকে অবসন্ন শরীরে ক্লান্ত নিঃশেষিত অবস্থায় ঘরে ফিরে বাংলাভাষা সেই-যে বিছানায় শোয়, পরের বছর একুশে ফেব্রুয়ারির রাত তিনটার সময় আবার তা জেগে ওঠে।

উৎসব বর্ণাঢ্য ও স্বল্পস্থায়ী। কর্মসূচী নিয়মবাঁধাকঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি। শারীরিক ও মানসিক শক্তির পুঁজি কম বলে উৎসব উদযাপনেই আমাদের সব শক্তি শেষ করে দিইতিলতিল কষ্টের ভেতর দিয়ে কর্মসূচীকে সম্পূর্ণ করতে পারি না। উৎসবের ঢাকের গগনবিদারী আওয়াজ আর আনন্দ-নৃত্যের আড়ালে আমরা কর্মসূচির গুরুতর কর্তব্যকে কেবলই ফাঁকি দিয়ে চলি।  

বাংলাভাষার প্রতি সাংবাৎসরিক কর্তব্যে অবহেলা করি বলে সেই ক্ষতিকে পুষিয়ে দেবার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি বর্ণাঢ্য ও আলোকোজ্জ্বল সব অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করতে হয়। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত খুব একটা লাভ হয় না। সব সাড়ম্বর উৎসবের মতোই উৎসবের বাতি নিভে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গভাষা-প্রীতির আয়ুও শেষ হয়ে যায়।


১৮ ফেব, ২০১৬

এশিয়া কাপে প্রবাসীমেলা

ঢাকাতে আবারও শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। মূল পর্বের আগে ১৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে চলবে প্রথম পর্ব। আফগানিস্তান সাথে বাছাই পর্বে অংশ নিবে হংকং, ওমান ও আরব আমিরাত। এই তিন দলে আছে ৪৮ জন খেলোয়াড়, যার মধ্যে ২৪ জন পাকিস্তানী ও ৯ জন ভারতীয়। প্রায় ৭০ শতাংশ প্রবাসী খেলোয়াড় দিয়ে গঠিত এই দলগুলো এশিয়া কাপে স্থান করে নিয়েছে। বাদ পড়ে গেছে নেপাল এর মত নিজস্ব খেলোয়াড় দিয়ে গঠিত দল। ক্রিকেট সম্প্রসারণের ছলে পাকিস্তানী ও ভারতীয় খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ক্ষেত্র তৈরি করছে এই এশিয়ান দলগুলো।

অভিবাসী খেলোয়াড় দিয়ে খেলা চালিয়ে এসব দেশ একসময় নিজ নিজ দেশের তরুণ প্রজন্মকে ক্রিকেট খেলতে উৎসাহী করে তুলতে পারবে সে আশা করিনা। আরব আমিরাত ভাড়াটে অভিবাসী খেলোয়াড় দিয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিল ১৯৯৬ সালে। ২০ বছর পেরিয়ে এসেও এই দলে এখনও ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন অভিবাসী।



১৪ আগ, ২০১৪

"উচিত ছিল শেখ মুজিবের লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া”--- কর্নেল তাহের

ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া--- কর্নেল তাহের।

মহিউদ্দিন আহমেদের প্রকাশিতব্য বই জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি থেকে অংশবিশেষ প্রথম-আলোতে প্রকাশিত হয়েছে। উপরের এই উক্তির প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে এভাবে:  ১৭ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের বাসায় যান পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে। ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া

কর্নেল তাহেরের এই উক্তি পড়ে আমি তীব্রভাবে হতাশ হয়েছি। পড়া মাত্র প্রথমেই আমার মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মানসিকতা ধারণ করে বাংলার মাটিতে কেউ বীর হতে পারে না।

মহিউদ্দিন আহমেদের দেয়া তথ্যের সত্যাসত্য যাচাইয়ের প্রশ্ন আছে। তবে তার বর্ণনা সামরিক ট্রাইব্যুনালে কর্নেল তাহেরের দেয়া জবানবন্দির সাথে অনেকাংশেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা সত্য যে কর্নেল তাহের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পক্ষপাতী ছিলেন। সে কারণেই হয়তো তিনি ১৫ই আগস্টের পরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন। ফারুক-রশীদ-ডালিম-খন্দকার মোশতাকের খুনি চক্রের সাথে ১৫ই আগস্ট সকালেই তিনি রেডিও ভবনে বৈঠকে যোগ দেন। খন্দকার মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠানেও কর্নেল তাহের উপস্থিত ছিলেন। এই খুনি চক্রের সাথে যোগাযোগের ফলশ্রুতিতেই হয়তো ১৫ আগস্টের পর খুনি মুজিব খুন হয়েছেঅত্যাচারীর পতন অনিবার্য শিরোনামে গণবাহিনীর পক্ষ থেকে লিফলেট প্রচার করা হয়।

কর্নেল তাহেরের আশা ছিল, খুনি চক্রকে দিয়ে দেশে সামরিক আইন জারি করে বাকশাল বাদে বাকি সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করানো।  মহিউদ্দিন আহমেদ তার বইয়ে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন১৫ই আগস্ট সকালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত জাসদ গণ বাহিনীর এক সভায় আনোয়ার হোসেন উপস্থিত সবাইকে বলেন, ভাইজান (লে. কর্নেল আবু তাহের) সকালে রেডিও স্টেশনে গিয়েছিলেন। তিনি মেজর ডালিমকে বকাঝকা করে বলেছেন, ...র মেজর হয়েছ, এখন পর্যন্ত একটা মার্শাল ল প্রক্লেমেশন ড্রাফট করতে পারলে না। 

বঙ্গবন্ধুকে উৎখাতের পক্ষে তার মনোভাব ও খুনিদের সাথে যোগাযোগের তথ্য কর্নেল তাহের নিজেই সামরিক ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করে গেছেন। তার জবানবন্দি থেকেই সরাসরি উল্লেখ করছি: ১৬ই আগস্ট আমি বুঝতে পারলাম মেজর রশিদ ও মেজর ফারুক শুধু আমার নামটাই ব্যবহার করছে, যাতে তাদের নেতৃত্বাধীন সিপাহীরা এই ধারণা পায় সে আমি তাদের সাথে রয়েছি। পরদিন ১৭ই আগস্ট এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান এই ঘটনার নেপথ্য নায়ক। আমি আরও বুঝতে পারলাম যে এর পেছনে খোন্দকার মোশতাকসহ আওয়ামী লীগের উপরের তলার একটা অংশও সরাসরি জড়িত। এই চক্র অনেক আগেই যে তাদের কর্মপন্থা ঠিক করে নিয়েছিল সেটাও আর গোপন রইল না। সেদিন থেকেই আমি বঙ্গভবনে যাওয়া বন্ধ করি ও এই চক্রের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করি।"

অর্থাৎবঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের নেপথ্য ভূমিকা এবং খোন্দকার মোশতাক পূর্ব-পরিকল্পনার বিষয় না থাকলে এবং সামরিক আইন জারি সহ বাকশাল বাদে বাকি সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনে রাজি হলে খুনি চক্রের সাথে কাজ করতে কর্নেল তাহেরের আপত্তি ছিল না। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে খুনের কোন ইচ্ছে তার ছিল নাকিন্তু খুন যখন হয়েই গেছে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে খুনিদের সাথেই তিনি কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। তাই অন্য বাড়তি ঝামেলা এড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর লাশ বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার ব্যাপারে তার এই উক্তি খুব একটা অবাস্তব কিছু না।

কর্নেল তাহের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন সমর নায়ক হিসাবে তিনি যতটা সফল, রাজনীতিতে তিনি ততটাই ব্যর্থ ।  মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন ও সম্মুখ সমরের নিজের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর স্বাধীন দেশে  একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে দেশের ও জনগণের মঙ্গলের জন্য যে কোন ভূমিকা রাখতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রাজনীতিতে তার সব ভূমিকা দেশের মঙ্গলের চাইতে অমঙ্গলেরই কারণ হয়েছে। গণবাহিনীর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারকে টালমাটাল করে দেয়া ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট সৃষ্টির ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে অনুকূল ভূমিকা রাখা, বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্রের সাথে যোগসূত্র স্থাপন, খুনিদের বিতাড়িত করে ক্ষমতার দখল নেয়া খালেদ মোশাররফকে উৎখাত করা এবং পরিশেষে জিয়ার হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া......বাংলাদেশে আজকের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির যে উত্থান তার সবকিছুর পেছনেই কর্নেল তাহেরের ব্যর্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। কর্নেল তাহের সৎ নিয়তে একের পর এক ভুল মানুষের পক্ষ নিয়েছেন। 

জেনারেল জিয়া বিচারের নামে এক প্রহসনের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। আমার ধারণা কর্নেল তাহেরের রাজনৈতিক ভূমিকা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে জিয়ার হাতে তাহেরের হত্যা আমাদের বিবেচনা বোধকে প্রভাবিত করে। জেনারেল জিয়া ও বিএনপির রাজনীতির বিরুদ্ধে কর্নেল তাহের এখন একটি অস্ত্র। কর্নেল তাহেরের রাজনৈতিক ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতি পর্যালোচনার চেয়ে জিয়ার হাতে তাহেরের ফাঁসির ঘটনাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

আসুন, একটি কল্পকাহিনী সাজাই। ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড হয়ে গেল। কর্নেল তাহের প্রাথমিক পর্যায়ে খুনিদের সাথে কিছুদিন কাজ করলেন। এরপর নভেম্বরে খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। ধরা যাক, জেল হত্যার ঘটনা ঘটলো না। ৭ই নভেম্বর জিয়ার পক্ষ নিয়ে কর্নেল তাহেরের সৈনিক বিপ্লব ঘটালেন। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হল। খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায় টিকে গেলেন। এবং কালক্রমে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে সরকার হল। আমার তো ধারণা, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী ভূমিকা ও ৭ই নভেম্বরের সৈনিক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রয়াসের কারণে তাজউদ্দীনের সেই কল্পিত সরকারই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিত। সে হিসাবে কর্নেল তাহেরের সৌভাগ্য যে তার হত্যাকাণ্ড জিয়ার হাতে ঘটেছিলো।  
    
বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় সদ্য স্বাধীন দেশে মানুষ অনেক অন্যায়-অবিচার ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য  কর্নেল তাহের যেমন তার কর্মকৌশল ঠিক করেছিলেন। সেই সময়েই তাজউদ্দীন, ভাসানী কিংবা মনি সিংহের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ছিলেন ও সেই প্রেক্ষাপটে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা থেকে তারা তাদের করনীয় নির্ধারণ করেছিলেন। এবং তাদের চিন্তা ভাবনার সাথে কর্নেল তাহেরের চিন্তা ও কর্মকৌশলের রয়েছে যোজন যোজন ফারাক।  আর তাই ১৯৭৫ এর প্রেক্ষাপটে আপনি যদি তাজউদ্দীন কিংবা মনি সিংহের বিচার-বিবেচনায় আস্থাশীল হন, তবে আপনি একই সাথে কর্নেল তাহেরের বিচার-বিবেচনায় আস্থাশীল হতে পারেন না। আর যাই হোক, তাজউদ্দীন কিংবা মনি সিংহের মত ব্যক্তিত্বেরা বঙ্গবন্ধুর লাশ বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলা তো দুরের কথা, শেখ মুজিবের রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে খুনিদের সাথে কোন আলোচনায় বসতেন না।


৯ এপ্রি, ২০১৪

তাজিকিস্তানে রাধারমণ


বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। জন্ম ১৮৩৩ সালে সিলেটেমৃত্যু ১৯১৫ সালে। এই সাধক কবি তিন হাজারেরও বেশী লোকগীতির স্রষ্টা। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের একটি ভ্রমর কইও গিয়া। রাধারমণের মৃত্যুর পর প্রায় ১০০ বছর পরে তাজিকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী Noziyai Karamatullo নিজের ভাষায় গাইছেন রাধারমণের "ভ্রমর কইও গিয়া গানের সুরে।

প্রখ্যাত তাজিক পপ গায়ক Karomatullo Qurbonov এর মেয়ে Noziyai Karamatullo। ১৯৯২ সালে তাজিক সিভিল ওয়ারের সময় তার ব্যান্ডের আরও কিছু সদস্য সহ Karomatullo Qurbonov কে হত্যা করা হয়।

রাধারমণের বিরহের সুর দেশ-কালের সীমানা মানে না।


৬ এপ্রি, ২০১৪

অনলাইন দেশপ্রেমিক


প্রবাসী অনলাইন দেশপ্রেমিকদের এখন খুব রমরমা অবস্থা। বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ঘরে বসে বসে খুব সহজেই আমরা এখন কোন শালারে ছাড়া ছাড়ি নাই টাইপ কঠোর দেশপ্রেম দেখাতে পারি। দেশে থাকাকালীন সময়ে নিজের পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে সময় দেয়া ছাড়া আর কিচ্ছু করি না। কিন্তু বিদেশে এসেই আমরা একেকজন ঝানু রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও সমাজসেবক হয়ে উঠি। দেশে যেমন সারা জীবন মালপানি কামিয়ে অবশেষে অনেকে রাজনীতিতে নামেন, আমরা প্রবাসী দেশপ্রেমিকেরাও বিদেশে নিজের নিরাপদ ক্যারিয়ার গড়ে রাজনীতিতে মন দেই। দেশের এই ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ আর আমাদের এই প্রবাসী দেশপ্রেমিকেরা মূলত একই শ্রেণী। মাটির সাথে, জনগণের নাড়ির সাথে বিন্দুমাত্র যোগসূত্র নেই, অথচ  মারমুখী গরম গরম বক্তিমে ঝেড়ে রেম্বো মার্কা প্রতিরোধের ডাক দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবার আগে। আমরা প্রবাসী অনলাইন রেম্বো দেশপ্রেমিকেরা দেশের সকল লড়াই সংগ্রামে আপনার সাথে আছি, তবে   লাথি উশটা মেরে  কস্মিনকালেও কিন্তু আমাদের বিদেশ থেকে বের করা যাবে না!!

২০ মার্চ, ২০১৪

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলোয়াড় আমদানি

অনেকের হয়তো মনে আছে ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফির কথা। সেই টুর্নামেন্টে ভাড়া করার পাকিস্তানী খেলোয়াড় ব্যবহার করে আরব আমিরাত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপে খেলার টিকেট যোগাড় করে নেয়। বাংলাদেশ ও কেনিয়ার প্রতিবাদের মুখে ১৯৯৬ সালে আইসিসি জন্মগত নাগরিক ছাড়া বাইরে থেকে খেলোয়াড় আমদানি করে জাতীয় দল গঠনের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ২০০৬ সাল থেকে এই কড়াকড়ি শিথিল করা হয়। যার বর্তমান চালচিত্র আমি নিচের একটি টেবিলে তুলে ধরেছি।



এবারের টি২০ বিশ্বকাপে প্রতিদলে আছে ১৫জন করে খেলোয়াড়। এই ১৫ জনের দলে আয়ারল্যান্ড, হংকং , নেদারল্যান্ড ও আরব আমিরাত দলে আছে ১০জনের বেশী আমদানি করা খেলোয়াড়!  হংকং দল যারা টুর্নামেন্টের ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছে, সেই দলে পাকিস্তানী খেলোয়াড় ৮ জন! আরব-আমিরাত দলে পাকিস্তানী ও ভারতীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৯ জন! যে নেদারল্যান্ড দল জিম্বাবুয়েকে আজ প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলো তাদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা খেলোয়াড় ১০ জন। ক্রিকেটের উন্নয়নের নামে এইভাবেই চলেছে এসোসিয়েট দেশগুলো আমদানি কর্মকাণ্ড।

টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য দাবী তুলছে যে আয়ারল্যান্ড দল, তারা তো যুক্তরাজ্যের  নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে খেলোয়াড় দিয়ে দল ভারী করছে। ইংল্যান্ড দল ও আয়ারল্যান্ড দল দুই দেশই  নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড় ব্যবহার করতে পারছে। আয়ারল্যান্ড দলে যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১০ জন। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের দলের মধ্যে এই খেলোয়াড় চালাচালি জায়েজ করতেই আইসিসির প্লেয়ার ইলিজিবিলিটি রুলস এর নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ধরা যাক, আয়ারল্যান্ডের এড জয়েস ১৯৯৯-২০০৬ সালে খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। এরপর ২০০৭-২০১০ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এরপর ২০১১ থেকে তিনি আবার আয়ারল্যান্ড দলে। স্বয়ং ইংল্যান্ড দলেই বিদেশী খেলোয়াড়ের সংখ্যা দলের এক-তৃতীয়াংশ।

এসোসিয়েট দেশগুলোর পারফর্মেন্স উন্নতির জন্য এভাবে খেলোয়াড় আমদানি নীতি চালু রেখে জাতীয় দলকে পরিণত করা হচ্ছে ক্লাবে। ফলে নেপাল ও আফগানিস্তানের মতো খাঁটি জাতীয় দলকে পড়তে হচ্ছে চাপের মুখে। এক সময়ের সারা জাগানো কেনিয়া দল তো এবার তাদের ওডিআই স্ট্যাটাস হারিয়ে ফেলেছে আমদানি নির্ভর আমিরাত দলের কাছে।

জাতীয় দল হোক দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসর।

১৮ মার্চ, ২০১৪

নেপাল ক্রিকেট দল

কাঠমুন্ডুতে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে নেপাল দলের খেলা দেখছে নেপালের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক। ১৮ই মার্চ ২০১৪।

এই হল ক্রিকেটের জন্য ভালোবাসা!
নেপাল ক্রিকেট দলের জন্য শুভকামনা।
এটি সত্যিকার অর্থেই একটি জাতীয় দল।
নেপাল দলের ১৫জন খেলোয়াড়ের প্রত্যেকেই জন্মগত-ভাবে নেপালি। 
হংকং, আমিরাত, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের মতো বিদেশী খেলোয়াড় দিয়ে গড়া দল নয়।
এই চার দলের ১৫ x ৪= ৬০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৪১জনই বিদেশী!!   
শতভাগ নেপালি খেলোয়াড় দিয়ে গড়া নেপালের জনগণের প্রতিনিধিত্ব-শীল এই নেপাল ক্রিকেট দলের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ আরও অবারিত হোক।