১৫ আগ, ২০১২

ঘাতকের পতাকা



২০১০ সালের ২৬শে মার্চ। ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। পাকিস্তানের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পাকিস্তান সিনেটের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটছেন ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মাননীয় মোঃ মাহফুজুর রহমান। আমাদের হাই কমিশনের তৈরি করা কেকের ছিরি দেখেন...স্বাধীনতা দিবসের কেকে বাংলাদেশের পতাকার পাশে পাকিস্তানের পতাকা! আমাদের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের হাই কমিশনে আমাদের পতাকার পাশে ঘাতকের পতাকা কিছুতেই শোভা পায় না।




মোঃ মাহফুজুর রহমান বর্তমানে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনেই ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত।

৫ আগ, ২০১২

ধারাভাষ্যের গল্প



২০০৬ সালের ঘটনা। ঢাকাতে কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট সিরিজ চলছে। ইএসপিএন কিংবা নিম্বাস সেই খেলা সরাসরি সম্প্রচারের জন্য লাইভ ফিডও প্রোডাকশন করছে। কিন্তু সেই ফিড দেখানোর জন্য কোন টিভি চ্যানেল এগিয়ে আসছে না। কেনিয়ার সাথে খেলা...তাই বিদেশী টিভি চ্যানেলের কোন আগ্রহ নেই। বিটিভি আলোচনা চালিয়েই যাচ্ছে...কিন্তু যথারীতি কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। এই অবস্থায় এগিয়ে এলো চ্যানেল-আই।

চ্যানেল-আই ক্রিকেট-প্রেমী দর্শকদের পাশে এসে দাঁড়ালো বটে, তবে সেই সাথে নিয়ে এলো এক অদ্ভুত আইডিয়া! খেলার অফিসিয়াল ইংরেজি কমেন্ট্রি তারা বন্ধ করে দিয়ে নিয়ে এলো একদল দেশী ভাষ্যকারকে, যারা স্টুডিওতে বসে টিভিতে খেলা দেখে দেখে বাংলায় খেলার ধারাবর্ণনা দিয়ে চললেন। একে তো সাবেকী আমলের বেতার ধারাভাষ্যের আদলে কথা বলা , সেই সাথে বল চলে গেল সীমানার বাইরে,চোখ চেয়ে দেখার মতো শট  জাতীয় শব্দ-ধর্ষণ চলতে লাগলো। ধারাভাষ্যের মান তো এমনিতেই যা হোক, স্টুডিওতে বসে কি লাইভ খেলার ধারাভাষ্য চলে নাকি? ফলাফল- তথৈবচ।

ঘটনার শেষ এখানেই নয়। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আয়োজন, তাই পর্যাপ্ত সংখ্যক ধারাভাষ্যকারও বোধ করি চ্যানেল-আই কর্তৃপক্ষ জোগাড় করে উঠতে পারেনি। ফলে নিয়মিত ধারাভাষ্যকারদের পাশাপাশি স্টুডিওতে কথা বলার জন্য নিয়ে আসা হতে লাগলো সব শ্রেণীর তারকা! স্টুডিওতে বসে নাটক-সিনেমার নায়ক-নায়িকারা দলে দলে পরিণত হতে থাকলো এক একজন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞে। আমাদের সে কি জ্বালা! অনেকেই সাউন্ড বন্ধ করে খেলা দেখতে লাগলো। দর্শকদের সরাসরি ফোন করার ব্যবস্থা থাকায় কেউ কেউ ফোন করে অফিসিয়াল কমেন্ট্রি চালু করার দাবী জানিয়ে ফেললো।  আমি সেদিনের সেই প্যান-প্যানানী শুনেই মুখ বুজে খেলা দেখছিলাম আর স্টুডিও থেকে সাউন্ড কন্ট্রোলের ভুলে মাঝে মাঝেই মূল ইংরেজি ধারাভাষ্য আলতো করে কানে চলে এসে আফসোস আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

সেদিনের সেই ধারাভাষ্য দলের মূল উপস্থাপক ছিলেন আব্দুল হামিদ। বাংলা-ক্রিকেট-ডট-কম ক্রিকেট ফোরামে সবাই মিলে সব রাগ ঝেড়েছিলাম এই ভদ্রলোকের উপর দিয়ে। খেলার পরদিনই আমি আমার সব বিরক্তি উজাড় করে দিয়ে আব্দুল হামিদকে মূল চরিত্র বানিয়ে রঙ্গব্যঙ্গঃ চ্যানেল আই ধারাভাষ্য শিরোনামে একটি রম্যগদ্য লিখলাম বাংলা-ক্রিকেট-ডট-কম ক্রিকেট ফোরামে। লিখাটির প্রতি বিপুল সাড়া দেখে বুঝেছিলাম আমার মতো আরও অনেক অনেক মানুষেরই বিরক্তির কারণ হয়েছিল এই উদ্ভট ধারাভাষ্যের আয়োজন। (বিঃ দ্রঃ সেদিনের সেই লেখাটি এই ব্লগের শেষে জুড়ে দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না)। অনেকে সেই লেখার কপি ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো চ্যানেল-আই দপ্তরে। যতদূর  মনে পড়ে, এক ডিগ্রী এগিয়ে গিয়ে এক উৎসাহী ফোরাম সদস্য কিভাবে যেন ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সেই লেখাটি পৌঁছে দিয়েছিলেন চ্যানেল-আই এর পরিচালনা পর্ষদের সভায়। ফোরাম সদস্যদের উৎসাহের মাত্রা ছিল যেমন তাতে করে আব্দুল হামিদের হাতেও তা পৌঁছে দেওয়ার আশঙ্কা একবারে দূর করে দেয়া যাচ্ছে না।

আমাদের সুপরিচিত সেই ভাষ্যকার আব্দুল হামিদ আজ প্রয়াত হলেন। সেদিনের সেই রম্যগদ্যের চরিত্র হিসেবে আব্দুল হামিদকে তুলে আনা ছাড়া তার সাথে ব্যক্তিগত সংশ্রবের কোন স্মৃতি আমার নেই। তবে রেডিওতে ঢাকার লীগের ফুটবল খেলার ধারাভাষ্য শোনার মাধ্যমে আমার শৈশব-কৈশোর জুড়ে অনেক আনন্দ-বেদনার স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছেন আব্দুল হামিদ। মফস্বল শহরে স্কুল জীবনের বহু সন্ধ্যায় গোপনে পড়া ফাঁকি দিয়ে রেডিওতে ফুটবল খেলার ধারাভাষ্যে কান পেতে থাকতাম। আর ঢাকার মাঠ থেকে প্রতিটি বিন্দু শিহরণ আমার কাছে বয়ে নিয়ে আসতো আব্দুল হামিদের কণ্ঠস্বর। তার কণ্ঠস্বর আমাকে অনেক অনেক বার উদ্বেলিত-আনন্দিত করেছে, অনেক দিন হয়তো বিরক্তও হয়েছি; তবে আজ অনুভব করতে পারছি,   রেডিওতে খেলা শোনার সেই সব  শিহরণ-আনন্দ-উৎকণ্ঠা মেশানো অসংখ্য মুহূর্তের মধ্য দিয়ে আমাদের সোনালী শৈশবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছেন আব্দুল হামিদের মতো মানুষেরা। আজ তার মৃত্যুর দিনে ধারাভাষ্যকার আব্দুল হামিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। 




রঙ্গব্যঙ্গঃ চ্যানেল আই ধারাভাষ্য

আব্দুল হামিদঃ  সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, বাংলাদেশ-কেনিয়া তৃতীয় ওয়ান-ডে ম্যাচ দেখার জন্য ফতুল্লা স্টেডিয়াম থেকে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি আব্দুল হামিদ এবং আলফাজ আহমেদ। এছাড়াও আপনাদের ক্রিকেট জ্ঞানের শূন্য ভাণ্ডার ভরিয়ে তোলার জন্য ক্রিকেট অনুরাগী বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিনভর আমরা আপনাদের সামনে হাজির করব।

প্রথম দৃশ্য

হামিদঃ আচ্ছা আলফাজ, আজকের খেলা সম্পর্কে তোমার কি ধারনা ?

আলফাজঃ হামিদ ভাই, কি আর বলবো, আজকের খেলাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা খেলা

হামিদঃ দর্শকমণ্ডলী, এই মাত্র আমরা আমদের বিজ্ঞ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ আলফাজ এর কাছ থেকে অত্যন্ত চমৎকার একটা তথ্য জানতে পারলামআজকের খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলা।

আলফাজঃ হামিদ ভাই, শুধু তাই নয়, আমরা আশা করব বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা আজ তাদের সব নৈপুণ্য ঢেলে দিয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে তাদের নিজেদেরকে আজ ফতুর করে ফেলবেন।

হামিদঃ তুমি ঠিকই বলেছ আলফাজ, নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে ফতুর হতে না পারলে ঊগান্ডার বিরুদ্ধে জয়লাভ অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।

আলফাজঃ হামিদ ভাই, আমরা কিন্তু আজ খেলছি কেনিয়ার সাথে, উগান্ডার সাথে নয়- যদিও কেনিয়া ও উগান্ডা উভয় দলের খেলোয়াড়রা দেখতে একই রকম কালো।

হামিদঃ শুধু কালো নয় আলফাজ, পাতিলের তলার মত কালো।

দ্বিতীয় দৃশ্য


হামিদঃ সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী
, আপনাদের সামনে আমরা এখন হাজির করেছি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য এক্সট্রা ও রূপসী নাচনে-ওয়ালী হুরমতি বেগমকে।

হুরমতীঃ আজকের খেলা কিন্তু খুব ঝাকানাকা-ঝাকানাকা।

হামিদঃ আমি তোমার সাথে সম্পূর্ণ একমত। দর্শকমণ্ডলী আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন হুরমতি কিন্তু শুধু চলচ্চিত্রের এক্সট্রা ভূমিকায় অভিনয়ই করেন না, তিনি কিন্তু ক্রিকেটও আমাদের মতই ভাল বোঝেন। এক কথায় তিনি একজন ক্রিকেট বোদ্ধা বা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ।

আলফাজঃ জী হামিদ ভাই, হুরমতি শুধু সিনেমার এক্সট্রা নন, তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের সুপারসাব

হুরমতীঃ অলক কাপালির চেহারা কিন্তু খুব ঝাকানাকা- ঠিক আমাদের ফিল্মের হিরোর মত।

হামিদঃ হুরমতি এইমাত্র বাংলাদেশের কৃতি খেলোয়াড় ও বিশ্বের সেরা ফিল্ডার অলক কাপালি সম্পর্কে সূক্ষ্ম তথ্য বিশ্লেষণ আমাদের সবাইকে অবহিত করলেন।

আলফাজঃ হুরমতি, আমি কিন্তু আপনার ফিল্মের ও আপনার নাচের খুব ভক্ত। আপনি কি আমাদের ও দর্শকদের ঝাকানাকা-ঝাকানাকা ঝাকানাকা-ঝাকানাকা দেহ দুলিয়ে দেখাবেন?

হামিদঃ তুমি ঠিক বলেছ আলফাজ, আমিও একটু ঝিমিয়ে পরেছি, গলার স্বর কমে গেছে- একটা দেহ-দুলানি নাচ দেখলে আমার শরীর জেগে উঠবে, গলার স্বর আবার চড়ে যাবে। দর্শকরাও খেলা দেখার পাশাপাশি আরও উন্মত্ত হয়ে উঠতে পারবে।

(হুরমতীর ঝাকানাকা-ঝাকানাকা ঝাকানাকা-ঝাকানাকা নৃত্য পরিবেশন)

আলফাজঃ হামিদ ভাই, আপনার কথা জানিনা, আমি কিন্তু এই নাচ দেখার পর পুরোপুরি উন্মাতাল হয়ে পরেছি। আমি যেন আফতাবের ছক্কার মারা বলের মত আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি। আমার নিজের উপর এখন যেন আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই- আপনি দয়া করে আমাকে একটু ধরে রাখুন।

হামিদঃ তোমাকে ধরে রাখবো কি, আমার নিজেরই তো বেহাল অবস্থা। হুরমতীর দেহের পরতে পরতে যেন লুকানো ছিল আশরাফুলের ব্যাটিং এর মত অজস্র সব শট। বাংলাদেশের ক্রিকেট ধারাভাষ্যের ইতিহাসে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশের ক্রীড়ামোদী দর্শকবৃন্দ আজ দেখতে পেলেন ক্রিকেটের দৈহিক ধারাভাষ্য।


তৃতীয় দৃশ্য
 


হামিদঃ সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, একটু আগে চ্যানেল-আই ভবনের নিচের রাস্তার দোকানে পান খেতে গিয়ে আমার সাথে পরিচয় হলো রাস্তায় বসা ভিক্ষুক রমজান মিয়ার সাথে। ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁর অগাধ আগ্রহের কথা জেনে আমি তাকে নিয়ে এসেছি আমাদের ধারাভাষ্য কক্ষে আপনাদের সামনে ধারাভাষ্য দেবার জন্য।

রমজানঃ আলহামদুলিল্লাহ। তয় লাঞ্চের সময় আপনেরা খালি টেলিফোনে বকবক করবেন নাকি ভাতও খাইবেন? আমার আবার চ্যানেল-আইতে ভাত খাইবার খুব ইচ্ছা।

হামিদঃ দর্শকমণ্ডলী, আপনাদের হয়তো জানা নেই- রমজান মিয়ার ক্রিকেট জ্ঞান কিন্তু আমাদের ধারাভাষ্যকারদের মত-ই টনটনে। তা রমজান ভাই, দর্শকদের একটু বলুন ক্রিকেটের সাথে আপনার সম্পৃক্তার কথা।

রমজানঃ ক্রিকেট খেলা শুরুই হয় একখান চাইর-আনা পয়সা ছুইরা মাইরা। আর আমার তো দিনভর কায়কারবার এই ভিক্ষার চাইর-আনা, আট-আনা পয়সা লইয়াই।

আলফাজঃ হামিদ ভাই, আমি আপনার প্রতিভা সন্ধানের দক্ষতায় অভিভূত। আসলেই ক্রিকেট খেলা তো টস এর খেলা। টস এর জয়-পরাজয় আজকাল খেলার ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয়। আর কেই বা না জানে যে ভিক্ষুকদের কাজকারবার টস এর কয়েন নিয়েই। একেকজন ভিক্ষুক আসলে ক্রিকেটের জন্য একেকজন টস এক্সপার্ট।

হামিদঃ তুমি ঠিক বলেছ আলফাজ- আমি আসলেই প্রতিভা অন্বেষণের ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ। এই বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন আর কত রমজান মিয়া। রমজান মিয়ার মত লোকদের খুঁজে বের করে জাতীয় দলের জন্য টস প্রশিক্ষণে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্ব-ক্রিকেটে এক অজেয় টসজয়ী দলে পরিণত হতে পারবে। ক্রিকেট বোর্ডের উচিত আমাকে অবিলম্বে প্রতিভা অন্বেষক পদে ভাল বেতনে নিয়োগদান করা।

আলফাজঃ যদি তাই হয়, তবে আমাকে কিন্তু আপনি আপনার সহকারী হিসাবে নিয়োগ দিতে ভুলবেন না। ই-এস-পি-এন এর জ্বালায় আমাদের ধারাভাষ্যের বাজারে বড়ই মন্দা। আর আমার ধারাভাষ্যের প্যানপ্যানানিতে আমার নিজের কানেই পচন ধরার অবস্থা।

হামিদঃ তুমি ঠিক বলেছ আলফাজ- গত চল্লিশ বছর ধরে আমরা এই একই প্যানপ্যানানি চালিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই।

চতুর্থ দৃশ্য

(মধ্যাহ্ন বিরতির টেলিফোন টক-শো চলছে)

হামিদঃ এই তো ফোন বেজেছে। খেলা তো আসলে কোন ব্যাপার নয়- খেলা তো খেলাই, ধারাভাষ্যই সব। দেখি আমাদের ধারাভাষ্য সম্পর্কে দর্শকদের কি অভিমত।

ক্রিং-ক্রিং-টেলিফোনঃ হ্যালো, আমি বাংলা-ক্রিকেট থেকে বলছি। আপনার ধারাভাষ্যের জ্বালায় তো আমি নিজেই টাকলু হয়ে গেলাম।

হামিদঃ জী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ।

ক্রিং-ক্রিং-টেলিফোনঃ হ্যালো, আমি বাংলা-ক্রিকেট থেকে বলছি। ভাইজান, আমাদের বাঁচান, প্যানপ্যানানি থামান।

হামিদঃ জী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ।

ক্রিং-ক্রিং-টেলিফোনঃ হ্যালো, আমি বাংলা-ক্রিকেট থেকে বলছি। দোহাই আল্লাহ্‌র- একটু থামেন। রহম করো খোদা।

হামিদঃ জী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ।

ক্রিং-ক্রিং-টেলিফোনঃ হ্যালো, বাঁচাও, বাঁচাও

হামিদঃ জী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ।

ক্রিং-ক্রিং-টেলিফোনঃ হ্যালো, আমি চ্যানেল-আই ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার বলছি। টেবিলে লাঞ্চ লাগাইছি, আপনারা খাইতে আসেন।

হামিদঃ জী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদও থুক্‌কু, থুক্‌কু, চলো আলফাজ খেয়ে আসি।

আলফাজঃ জী হামিদ ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি আপনার সাথে একমত।

শেষ দৃশ্য

(লাঞ্চ সেরে এসে হামিদ ভাই এবং আলফাজ ভাই ঝিমচ্ছেন)

হামিদঃ  আলফাজ, ভাত খেয়ে বড্ড ঘুম পাচ্ছে। তুমি টিভির সাউন্ড পুরো মিঊট করে দাও। খেলা নীরবে চলুক। এসো আমরা একটু ঘুমিয়ে নেই।

আলফাজঃ জী হামিদ ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি আপনার সাথে একমত।

হামিদঃ আলফাজ...ঘুম...ঘড়ড়ড়ড় ঘড়ড়ড়ড় (নাক ডাকার শব্দ)

আলফাজঃ হামিদ ভা... ঘড়ড়ড়ড়...ঠি-ই-ই-ক বলে......ছেনননন... ঘড়ড়ড়ড়.

হামিদঃ ঘড়ড়ড়ড় ঘড়ড়ড়ড়

আলফাজঃ আমি...ঘড়ড়ড়ড়....একমত..... ঘড়ড়ড়ড়

(অতঃপর দর্শকবৃন্দ প্যানপ্যানানি মুক্ত হইয়া নীরবে খেলা উপভোগ করিতে লাগিলো)


রঙ্গব্যঙ্গঃ চ্যানেল আই ধারাভাষ্য
২০শে মার্চ, ২০০৬
অস্টিন, টেক্সাস
বাংলাক্রিকেট-ডট-কম ফোরামে প্রথম প্রকাশিত।



জুতোর দোকানের মানুষ



আমার ছেলে সময়। জুতো পরে দৌড়াতে গেলে  পায়ে বেশ অস্বস্তি বোধ করে। নানা সাইজের জুতা কিনেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই আজ ওকে নিয়ে গেলাম নিউ ব্যালেন্স সু ষ্টোরে।  ওরা তার পায়ের সাইজ নানাভাবে মাপামাপি করে একজোড়া জুতো খুঁজে এনে দিলো। সেটা পায়ে দিয়ে আরাম করে দৌড়াতে পেরে সময় খুব খুশী।

গল্পটা এই পর্যন্ত ভালোই ছিল। ফেরার পথে গাড়িতে সময় আমাকে জানালো, বাবা, আমি বড় হয়ে জুতার দোকানের মানুষ হবো

এতোদিন নানা কার্টুন চরিত্র দেখে সময় তার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতো। আজ প্রথম কোন মানুষের কীর্তি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সে তার জীবনের লক্ষ্য খুঁজে নিলো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা!