অনেকের হয়তো মনে আছে ১৯৯৪
সালের আইসিসি ট্রফির কথা। সেই টুর্নামেন্টে ভাড়া করার পাকিস্তানী খেলোয়াড় ব্যবহার
করে আরব আমিরাত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপে খেলার টিকেট যোগাড় করে
নেয়। বাংলাদেশ ও কেনিয়ার প্রতিবাদের মুখে ১৯৯৬ সালে আইসিসি জন্মগত নাগরিক ছাড়া
বাইরে থেকে খেলোয়াড় আমদানি করে জাতীয় দল গঠনের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ২০০৬ সাল থেকে
এই কড়াকড়ি শিথিল করা হয়। যার বর্তমান চালচিত্র আমি নিচের একটি টেবিলে তুলে ধরেছি।
এবারের টি২০ বিশ্বকাপে
প্রতিদলে আছে ১৫জন করে খেলোয়াড়। এই ১৫ জনের দলে আয়ারল্যান্ড, হংকং , নেদারল্যান্ড ও আরব
আমিরাত দলে আছে ১০জনের বেশী আমদানি করা খেলোয়াড়!
হংকং দল যারা টুর্নামেন্টের ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিয়ে
বাহবা কুড়িয়েছে, সেই দলে পাকিস্তানী খেলোয়াড় ৮ জন!
আরব-আমিরাত দলে পাকিস্তানী ও ভারতীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৯ জন! যে নেদারল্যান্ড দল
জিম্বাবুয়েকে আজ প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলো তাদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ
আফ্রিকা থেকে আমদানি করা খেলোয়াড় ১০ জন। ক্রিকেটের উন্নয়নের নামে এইভাবেই চলেছে
এসোসিয়েট দেশগুলো আমদানি কর্মকাণ্ড।
টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য দাবী
তুলছে যে আয়ারল্যান্ড দল, তারা তো
যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে
খেলোয়াড় দিয়ে দল ভারী করছে। ইংল্যান্ড দল ও আয়ারল্যান্ড দল দুই দেশই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড় ব্যবহার করতে
পারছে। আয়ারল্যান্ড দলে যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা
খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১০ জন। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের দলের মধ্যে এই খেলোয়াড়
চালাচালি জায়েজ করতেই আইসিসির প্লেয়ার ইলিজিবিলিটি রুলস এর নানা পরিবর্তন আনা
হয়েছে। যেমন ধরা যাক, আয়ারল্যান্ডের এড জয়েস ১৯৯৯-২০০৬
সালে খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। এরপর ২০০৭-২০১০ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এরপর
২০১১ থেকে তিনি আবার আয়ারল্যান্ড দলে। স্বয়ং ইংল্যান্ড দলেই বিদেশী খেলোয়াড়ের
সংখ্যা দলের এক-তৃতীয়াংশ।
এসোসিয়েট দেশগুলোর পারফর্মেন্স
উন্নতির জন্য এভাবে খেলোয়াড় আমদানি নীতি চালু রেখে জাতীয় দলকে পরিণত করা হচ্ছে
ক্লাবে। ফলে নেপাল ও আফগানিস্তানের মতো খাঁটি জাতীয় দলকে পড়তে হচ্ছে চাপের মুখে।
এক সময়ের সারা জাগানো কেনিয়া দল তো এবার তাদের ওডিআই স্ট্যাটাস হারিয়ে ফেলেছে
আমদানি নির্ভর আমিরাত দলের কাছে।
জাতীয় দল হোক দেশের জনগণের
প্রতিনিধিত্বশীল দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসর।