২৭ ফেব, ২০১৩

এসো নিজে করি: আন্দোলনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সহজ ফর্মুলা

 

কোন আন্দোলন আপনাকে বেকায়দায় ফেলেছে? কোন ভাবেই আর সেই আন্দোলন সামাল দিতে পারছেন না? চিন্তা নেই, আন্দোলন মোকাবেলা না করতে পারলেও আপনার গা বাঁচানোর জন্য আছে বিকল্প ব্যবস্থা। আন্দোলনে বিভ্রান্তি তৈরি করুন। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য অনুসরণ করুন এই সহজ ৪-দফা ফর্মুলা। এই ফর্মুলার কার্যকারিতার ব্যাপারে আমরা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে থাকি। অতীতে এই ফর্মুলা আপনার বাপ-দাদারা বারবার কাজে লাগিয়েছে। আপনিও পারবেন।

(১) আন্দোলনের চরিত্র হননের কৌশল নির্ধারণ করুন
আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের গাঁজাখোর, পতিতা বা ধর্ষক হিসাবে আখ্যা দিয়ে লোক খেপিয়ে তোলা কঠিন। লোক ক্ষেপানোর জন্য অবশ্যই ধর্ম নিয়ে খেলা করতে হবে। সুতরাং আন্দোলনের বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য আন্দোলনের “ধর্মবিরোধী” চরিত্র আবিষ্কার করুন।

(২) আন্দোলনের সাথে জড়িত নাস্তিকতায় বিশ্বাসী কোন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করুন
আন্দোলনের “ধর্মবিরোধী” চরিত্র আবিষ্কারের সহজতম উপায় হল আন্দোলনের সাথে জড়িত কোন নাস্তিককে খুঁজে বের করা। কোন নামী দামী বিখ্যাত নাস্তিক খোঁজার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন কোন ছোট খাট অখ্যাত নাস্তিক হলেই চলবে। তাকে বিখ্যাত করার ব্যবস্থা আপনিই করবেন।

(৩) আপনার সুবিধাজনক অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে বিখ্যাত করে তুলুন
আপনার চিহ্নিত অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে বিখ্যাত বানান। কাউকে বিখ্যাত বানানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল রাতের অন্ধকারে ধরে জবাই করে দেয়া। ইনশাল্লাহ, মুহূর্তেই সেটা নিউজ কভারেজ পেয়ে যাবে।

(৪) কতল করে দেয়া নাস্তিকের “ধর্মবিরোধী” লেখা লিখি নিয়ে প্রচারে নামুন
জবাই করে বিখ্যাত বানিয়ে নেয়ার সহজ কাজটি শেষ। এই বার আন্দোলনে বিভ্রান্ত তৈরীর জন্য আসল পদক্ষেপ নিন। আপনি জবাই করে যাকে বিখ্যাত বানিয়ে নিলেন, এবার তার নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালিখি দিয়ে প্রচার চালিয়ে লোক খেপিয়ে তুলুন। সেই লোকের নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালিখি পর্যাপ্ত না থাকলে সমস্যা নেই, আপনি মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজেই কিছু রচনা করে ফেলুন। আল্লাহ-তায়ালার অশেষ রহমতে আপনি অল্প চেষ্টাতেই নাস্তিকতা বিষয়ে লোক ক্ষেপানোর উপযোগী লেখা পয়দা করে ফেলতে পারবেন।

লক্ষ্যে অটুট থাকুন...লাইন থেকে বিচ্যুত হবেন না। অবিশ্বাসীদের সাথে বাহাসে জড়িয়ে কিংবা অন্য অবিশ্বাসীদের ধরে ধরে মারপিট করে সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, ধর্ম প্রচার কিংবা ধর্মবিরোধী মতামত প্রতিরোধ আপনার লক্ষ্য নয়। আপনার লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। যে আন্দোলন বিভ্রান্ত করার জন্য আপনি এক অভাগাকে ধরে কোরবানি করে দিয়েছেন, সেই আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকুন। ইনশাল্লাহ, আল্লাহ-তায়ালা আপনার কোরবানি কবুল করবেন। আমিন।

১৪ ফেব, ২০১৩

শাহবাগের পরীক্ষা



১৯৫২
, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০১৩......আমাদের জাতীয় গণজাগরণের এক একটি মাইল ফলক।

পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি চার্জ নেই, গ্রেফতার-হয়রানীর দুশ্চিন্তা নেই, লেফটেনেন্ট জেনারেল ট্রাক এসে শরীর পিষে ফেলার শঙ্কা নেই, কিংবা নেই যে কোন সময় সেনা কিংবা ভাড়াটে গুণ্ডার বুলেটে লাশ হয়ে যাবার ভয়......অতীতের যে কোন গণ-আন্দোলন থেকে ২০১৩
র গণ-আন্দোলনের এই এক বড় পার্থক্য। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিপরীতে লড়াই করতে পারার সাহস-দৃঢ়তা যে কোন গণ-আন্দোলনের অন্তর্নিহিত শক্তির একটি বড় মাপকাঠি। ২০১৩কে এখনো সেই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি।

১১ ফেব, ২০১৩

সাংসদদের শুল্কমুক্ত গাড়ীর হিসাব নিকাশ



অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ৩১৫ জন সাংসদকে শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার সুবিধা দেওয়ায় সরকারকে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার কর রেয়াত দিতে হয়েছে।

৩১৫ জনের জন্য কর রেয়াতের পরিমাণই যদি ১১ শো কোটি টাকা হয়, তাহলে গড়ে প্রতি সাংসদের প্রাপ্ত কর রেয়াতের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। প্রতিটি গাড়ীতে যদি এই পরিমাণ টাকা কর রেয়াত দেয়া হয়, তাহলে হিসাব মতো করসহ প্রতিটি গাড়ির মোট মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা।

সাংসদদের বেশীর ভাগই কিনেছেন টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। যদি ধরে নেই যে তারা ২০১২ সালের ব্র্যান্ড নিউ মডেলের সর্বোচ্চ সিলিন্ডার ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০০০ সিসির টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ীটি কিনেছেন। সেক্ষেত্রে ২০১২-১৩ অর্থবছরের করনীতি অনুযায়ী এসব গাড়ীর শুল্ক হার হবে ৮৩০%

এখন অঙ্ক কষে দেখি, শুল্কসহ একটি গাড়ির মোট মূল্য যদি ৩ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে কর দেয়ার আগে সেই গাড়ীর মূল্য হবে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ ৪২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে শুল্কমুক্ত ভাবে দেশে গাড়ীটি আমদানি করার পর বিক্রি করে দিয়ে একজন সাংসদ নেট মুনাফা করতে পারেন কমপক্ষে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।

দল থেকে মনোনয়ন কিনে নিয়ে নির্বাচন করলে নির্বাচনী-মূলধনের টাকা তো একটি গাড়ী দিয়েই প্রায় উঠে চলে আসে!!


১০ ফেব, ২০১৩

শাহবাগে শিরোনামহীন



আমার ধারণা মানুষের বালের দৈর্ঘ্য নিজ দেশের সাথে দূরত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। দেশ থেকে যে যত দূরে থাকে
, তার বালের দৈর্ঘ্য তত বেশী। সে কারণেই বিদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা দেশপ্রেমিকেরা ইন্টারনেটে বসে কারণে অকারণে এতো বাল ফালায়।

শিরোনামহীন ব্যান্ড দিগন্ত টিভিতে গান করেছে পরোক্ষভাবে জামাতিদের বিনোদিত করেছে, তা বুঝলাম। কিন্তু শাহবাগে এসে তারা প্রত্যক্ষভাবে জামাতি রাজাকারদের ফাঁসির দাবী করবে। শাহবাগেসমবেত হওয়া হাজার হাজার গন-মানুষের সামনে তারা গান গাইবে। যদি দেশের মাটিতে সমবেত মানুষ তাদের গ্রহণ না করে, কারোরই সাধ্য নাই শাহবাগের উত্তাল সড়কে জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গান করার। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পর্যন্ত পারে নাই, আর শিরোনামহীন ব্যান্ড কোথাকার কি?

শিরোনামহীন ব্যান্ডকে বলছি, শাহবাগে যান। জনতার সামনে দাঁড়ান। জনতাই রায় দেবে। বিদেশের মাটিতে ইন্টারনেটের সামনে শরীরের বিভিন্ন অংশে বালের হাই ব্যালেন্স নিয়ে বসে থাকা দেশপ্রেমিকদের কথায় মাফ চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মাফ যদি চাইতে হয়, শাহবাগের সমবেত জনতাই তা জানিয়ে দিবে। জনতার রায় যদি আপনাদের বিপক্ষে যায়, লক্ষ লক্ষ উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর প্রবল কণ্ঠে আপনাদের প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে দিবে। আর যদি জনতা আপনাদের গ্রহণ করে নেয়, গুটিকতক মানুষের মিনমিনে প্রতিবাদ জনতার উল্লাসে হারিয়ে যাবে।

আসুন জনতার পরীক্ষার সামনে দাঁড়ান

৬ ফেব, ২০১৩

কাদের মোল্লার রায়



আদালতের রায়ে রাজাকারের ফাঁসি না হওয়ায় অনেকেই দেখি সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে একহাত নিচ্ছেন। কসাই কাদেরের ফাঁসির রায় না হওয়ার দায় যদি আওয়ামী লীগ সরকারের হয়
, তবে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হওয়ার কৃতিত্বও কি আওয়ামী লীগ সরকারের? তাই যদি হয়, ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন নয়, বিচারের নামে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রহসন চালাচ্ছে...জামাতের বলে আসা এতো দিনের অভিযোগের সাথে কি আমরা একমত হয়ে যাচ্ছি না? রায়ের বিরোধিতা করে এর দায় সরকারের ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে প্রকারান্তরে আমরা নিজেরাই তো জামাত-শিবিরের কাতারে সামিল হয়ে সবাই একযোগে ছাগু হয়ে যাচ্ছি।

সমস্যায় পড়লাম...কার ঘাড়ে যে নিরাপদে দোষ চাপাই?