৬ সেপ, ২০১০

আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রয়াত


টিভি চালু করলাম, বাংলাদেশের খবর চলছিল।  ডঃ এম এম মোখলেস জাতীয় নামের কে একজন কথা বলছেন, তার নিচে পরিচিতি লিখা শকুন বিশেষজ্ঞআমার হাসির রেশ না মিলাতেই প্রচারিত হলো আব্দুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যুর সংবাদ। মানুষের অনুভূতিতে হাসি আর শোকের দূরত্ব খুবই কম।

আব্দুল মান্নান সৈয়দ একজন কবি,কথাশিল্পী,প্রাবন্ধিক ও গবেষক এক সময় লিখেছেন একধারে সংবাদ ও সংগ্রামের মতো বিপরীত ধারার পত্রিকায় সাহিত্যের প্রশ্নে বিভাজনে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনি তাই এই সময়েও একই সাথে তাঁর সাহিত্য কর্মের মূল্যায়ন প্রকাশিত হয় প্রথম-আলো, জনকন্ঠ, আজাদী ও সংগ্রামে সচলায়তন আর সোনারবাংলা ব্লগে তিনি একই সাথে প্রাসঙ্গিক লেখক হিসেবে আব্দুল মান্নান সৈয়দ সার্বভৌম।

টিভিতে অ্যাম্বুলেন্সে শুইয়ে রাখা মান্নানের মৃতদেহের ছবির পরপরই পর্দায় ভেসে এলো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মুখ। খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে গেলেন তার অনুভূতির কথা। আমার মনে পড়লো  এক সময় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কাছ থেকে জানা এক বন্ধুত্বের গল্প।

৪৬ বছরের দীর্ঘ বন্ধুত্ব। সময়ের এতো সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুই বন্ধু নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে কেবল মৃত্যুই এই বন্ধুত্বের অবসান ঘটাতে পারে। মৃত্যু নিয়ে তাই দুই বন্ধু সায়ীদ আর মান্নানের মাঝে রসিকতা হতো- কে আগে যাবে? জার্মানীর গ্যেটে আর শিলারের বন্ধুত্বের উপমা দিয়ে মান্নান ঠাট্টা করতেন- কার আগে মৃত্যু আসে তার মাধ্যমেই ঠিক হবে এই দুই বন্ধুর মাঝে এদেশে কে ছিল গ্যেটে আর কে ছিল শিলার। আজ আমরা বাংলাদেশের শিলার কে হারালাম।  


আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রয়াত
৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০
নক্সভিল, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত

১৫ আগ, ২০১০

আমেরিকার বাবরী মসজিদ



৯/১১ হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত টুইন টাওয়ারের কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলায় ব্যয়ে
 গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা আমেরিকার সংবাদ মাধ্যম জুড়ে অনেকটা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমেরিকার মাটিতে সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে যে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যে কারো ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের সংবিধানিক অধিকাররের কথা ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী বন্ধুদের ফেসবুকে ও বাংলাদেশের মিডিয়াতেও দেখি বিষয়টা বেশ গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে।

মসজিদ বিরোধীতাকারীদের বক্তব্য হচ্ছে ৯/১১ হামলার স্মৃতি ঘেরা এই এলাকায় মসজিদ নির্মাণ সেই হামলায় নিহতদের প্রতি অসন্মান দেখানোর সামিল। এছাড়াও সেই ঘটনায় যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের পরিবারেরর সংবেদনশীল অনুভূতিতেও আঘাত হানবে গ্রাউন্ড জিরোর আশেপাশে মুসলিমদের উপাসনালয় নির্মাণের এই প্রয়াস । 

মসজিদের সমর্থনকারীদের বক্তব্য হলো সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হলে সম্পুর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গৃহীত এই মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পকে কোন ভাবেই বাধা দেয়া চলবে না। অনেকের আরো বক্তব্য হলো- এটি শুধু মসজিদ নয়, এটি হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার সেখানে মসজিদের পাশাপাশি থাকবে সুইমিং পুল, জিম ইত্যাদি এবং ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এই কমিউনিটি সেন্টারের দুয়ার সবার জন্য খোলা থাকবে।

আইনগত অধিকার ও সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রশ্নে এই মসজিদ নির্মাণে কারো আপত্তি থাকবার কথা নয়। কিন্তু ৯/১১ হামলায় নিহতদের পরিবার ও আমেরিকার নাগরিকদের অনুভূতির সংবেদনশীলতার প্রশ্নটি বিবেচনার দাবী রাখে। ইসলামের নাম ব্যবহার করে এই হামলা হয়েছিল। এখন যতই সকল মুসলিম খারাপ নয় জাতীয় বাণী দেই না কেন, এই হামলার সাথে মুসলিম ও ইসলামের নাম জড়িত থাকার বিষয়টি তো আর মুছে যায় না।

আমাদের অভিজ্ঞতা কি বলে? একাত্তরের গণহত্যা চালানো হয়েছিল ইসলামের দোহাই দিয়ে। আমাদের রাস্ট্রনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ইসলামের আতঙ্কজনক রূপ কি আমাদের ভাবনায় আসেনি? তাই সংবেদনশীলতার প্রশ্নটি ভাবনার দাবী রাখে। বাংলাদেশে একুশের শহীদ মিনারের পাশে যদি কেউ উর্দু সাহিত্য পরিষদ কিংবা জাতীয় স্মৃতি সৌধের পাশে বাংলাদেশ-পাকিস্তান মৈত্রী সংঘ বা বিহারী সাংস্কৃতিক সংসদ নির্মাণ করতে চাইতো, সেটা কি আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করতো না?

মসজিদ নিয়ে এই বিতর্ক মনে করিয়ে দিল ভারতের সেই বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক ও তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার এই মসজিদ ইস্যুতে যেন জল ঘোলা করার অপচেষ্টা কেউ করতে না পারে- সেদিকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
  আগামী দিন গুলোতে বাংলাদেশে যারা এই 
গ্রাউন্ড জিরো প্রসঙ্গটি আড্ডায় বা মিডিয়ার আলোচনায় আনবেন, আমেরিকার মানুষের এই সংবেদনশীলতার বিষয়টিও সহানুভুতির সাথে বিবেচনায় রাখবেন বলে আশা রাখি।

আমেরিকার বাবরী মসজিদ
১৫ই আগস্ট, ২০১০
নক্সভিল, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত

৯ আগ, ২০১০

ব্রা মানেই বিপদ



এই ব্লগটি শিক্ষামূলক। গাড়ী চালনা, চক্ষু নিয়ন্ত্রন এবং ব্রা বিষয়ক সংযম সংক্রান্ত বেশ কিছু শিক্ষনীয় নীতিবাক্য আপনারা এখানে পাবেন।

আমি তখন আমেরিকার জর্জিয়ায় অজ পাড়াগাঁর এক সামরিক ঘাটিতে আছি। আমার ইউনিটেই আছে আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত সেনাসদস্য ডিন ডেভলিন। সিগারেট আর নারীলিপ্সার এক জীবন্ত কিংবদন্তি সে তার সেই কীর্তিকান্ডের গল্প পরে একদিন করা যাবে। আজ অন্য গল্প। ডিন ডেভলিনের কাজ তখন এক বিশাল হামভি (হামার গাড়ীর সশস্ত্র সামরিক ভার্সন) চালিয়ে সেই সেনা ঘাটির পথ ঘাট দাপিয়ে বেড়ানো। এই দেখে আমার শখ হলো সেই হামভি একবার নিজে চালিয়ে দেখা। আমাকে খুশী রাখতে ডিনের কোন আপত্তি নেই। আমিও আমার মিলিটারি বসদের বলে কয়ে আমার শখ মেটানোর পার্মিশন নিয়ে নিলাম। ব্যস, এক বিকেলে অফিস শেষ করে ডিনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। ঘটনার সুত্রপাত এখানেই।

বেশ কিছুদুর হামভি চালিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। চালাচ্ছি আর বনজঙ্গল ঘেরা ঘাটির রাস্তার আশে পাশের বৈকালিক প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছি তখন গ্রীষ্মকাল। স্নিগ্ধ বিকেল। হঠাৎ দেখলাম বিকেলের সোনারোদে রাস্তার পাশের এক সবুজ ঘাসের লনে গোলাপী ব্রা পরিহিতা অর্ধবসনা এক তরুনী আধশোয়া ভঙ্গিতে সূর্যস্নান করছে। নারীলিপ্সু ডিনের মনে হলো এক্ষুনি গাড়ী থামিয়ে সেই অর্ধবসনাকে তার জিজ্ঞেস করা উচিত আমি কি কোন সাহা্য্য করতে পারি? আমি সেই গোলাপী ব্রার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই ভাবছিলাম দুনিয়ায় এতো কিছু থাকতে ব্যাটা ডিনের কেন মনে হলো যে তার কাছ থেকে সেই তরুনীর কোন সাহায্য প্রয়োজন এবং অর্ধবসনা হয়ে সূর্যস্নানের সাথে কোন ব্যাটা ছেলের সাহায্য করতে চাওয়ার সম্পর্কটাই বা কি। হঠাৎ এক ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেলাম। অতি মনযোগের সাথে ব্রা দেখতে গিয়ে রাস্তার বাঁকটাই খেয়াল করিনি। পনেরো-বিশ ফূট উঁচু এক রোড সাইন ততক্ষনে আমার হামভির ধাক্কায় পপাত ধরনীতল।

পুলিশ এলো। গাড়ীর তেমন কিছুই হয়নি। বিশালাকৃতির রোড সাইনের ধ্বংসসাধনই আমাদের ব্রা পর্যবেক্ষনের প্রধান পরিণতি। ঘটনার আকস্মিকতায় ব্রা, অর্ধবসনা তরুনী, বিকেলের সোনারোদ- সব কিছুই মন থেকে ধুয়ে মুছে গেল। পুলিশ পুলিশের মতো বিচার বিশ্লেষন করে নির্ধারন করলো এটি একটি প্রশিক্ষণকালীন সামরিক দুর্ঘটনা ব্যস, কেস সেখানেই খতম। আর কোন ঝামেলা রইলো না। আমরাও স্বস্তিতে বাড়ী ফিরে এলাম। তবে সেই থেকে শিক্ষা হলো গাড়ী চালাতে গিয়ে ব্রা দেখা মোটেই নিরাপদ কোন কর্ম নয়। 

চোর পালালে যেমন বুদ্ধি বাড়ে, তেমনি দুর্ঘটনার পর তা এড়ানোর যা যা কলাকৌশল আমার জানা ছিল তা সবই মনে পড়তে থাকলো। বাংলাদেশে গাড়ী চালানোর নির্ভুল কৌশল সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক ড্রাইভার আমাকে বলেছিল, ব মানেই বিপদ, তাই ব দেখলেই ব্রেক। এই ব গুলো হলো বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাস্তায় বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর-ই সব বিপদের উৎস। বুড়া, বাচ্চা, বাছুর আর বাজারের আমজনতা গাড়ীর সামনে কখন কি করে বসে তার কোন গ্যারান্টি নাই। তাই বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর দেখা মাত্রই জলদি ব্রেক কষে গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।  ব দেখে ব্রেক কষলেই সব মুশকিল আসান। আমি খুব ভালো ভাবে এই তত্ব মুখস্ত করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ বুঝলাম ড্রাইভার সাহেবের তত্ত্বে বিশাক এক ফাঁক রয়ে গেছে। বতে ব্রা-ও হয়। তিনি যদি বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর এর সাথে ব্রা বিষয়ক সতর্কবানী যুক্ত করে দিতেন, তাহলে আমি আজ ব্রা দেখেই ব্রেক কষে দিতাম এবং ব্রা দেখতে গিয়ে আমার এই সামরিক দুর্ঘটনাও ঘটতো না।

ব্রেক কষে না হয় গাড়ীর নিয়ন্ত্রন হলো, কিন্তু মনেরর নিয়ন্ত্রনের কি ব্যবস্থা? এই বিষয়েও কিন্তু আমার কিছু জানা ছিল। বাবার বদলীর সুবাদে বছরের মাঝখানে গিয়ে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছি নতুন এক স্কুলে। নতুন জায়গা, নতুন স্কুল- সব কিছুই অচেনা। ধর্মশিক্ষা ক্লাসে তাই উদাস হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফেলে আসা স্কুল আর বন্ধুদের কথা ভাবছিলাম। ক্লাসের জানালা দিয়ে তাকালেই এক বাড়ীর ছাঁদ। কোন কুক্ষনে সেই ছাদে তখন স্নান সেরে ভেজা শরীরে কাপড় নাড়তে এসেছে এক কাজের বুয়া। খোদার কসম, আমার সেদিকে মোটেই নজর ছিলনা। আমি শুধু স্মৃতিকাতরতায় উদাস হয়ে জানালা দিয়ে আকাশ পানে চেয়েছিলাম।  কিন্তু ধর্মক্লাসের মৌলভী স্যার আমার বাহিরের দৃস্টি ও ভেজা শরীরে ছাদে বুয়ার আগমন একসাথে লক্ষ্য করলেন। যার মনে যেই খেয়াল। তিনি ক্লাস ভর্তি ছেলে মেয়ের সামনে আমার নাম ধরে বললেন, শোন মাইনুদ্দীন, মনে রাখবা চক্ষুরও জেনা আছে  এই নিয়ে সেই স্কুলে বাকী দিনগুলো আমার নানা টিটকারী ও গঞ্জনার মধ্যে জীবন কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু হায়, তবু মাইনুদ্দীন সেই কথা মনে রাখে নাই। চক্ষুর জেনা করতে গিয়েই তো আজ এই দশা।

জনকল্যাণের জন্য আমার এই শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা ব্লগে প্রকাশ করলাম। দেশে বিদেশে যেসব তরুন বন্ধুরা গাড়ী চালান তাদের জন্য পরামর্শঃ ব দিয়ে বিপদ কিন্তু শুধুমাত্র ৪টি নয়; ব দিয়ে বিপদ ৫টি। বুড়া, বাচ্চা, বাছুর, বাজার এবং ব্রা। আর সব কিছুর পাশাপাশি ব্রা দেখিলেও সাবধান! গাড়ী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মনের উপরও নিয়ন্ত্রন থাকা চাই। কিন্তু যৌবনের মন কি আর কথা শোনে? তাই চাই চক্ষুর উপর নিয়ন্ত্রন। আফসোস, মাইনুদ্দীন মনে রাখে নাই। কিন্তু আপনারা মনে রাখবেনঃ চক্ষুরও কিন্তু জেনা আছে।

ব্রা মানেই বিপদ
৯ই আগস্ট ২০১০
নক্সভিল
, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত

৬ আগ, ২০১০

সঙবাদ



খবরঃ
 জাতীয় সংগীতকে মোবাইল ফোনে রিং টোন হিসেবে এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করাকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। (প্রথম আলো)

বুঝলাম আইনের ভিত্তিতেই এই আদেশ। কিন্তু রিট মামলা যে দায়ের করলো তার প্রাণে কি গান নাই? সঙ্গীত ভালোবাসার  জিনিস। দেশপ্রেমও ভালোবাসার জিনিস। ভালোবেসে তা আমি আমার ফোনে ব্যবহার করলে সমস্যা কি?  কিন্তু সে রকম আইনী শ্রদ্ধা দেখাতে হলে তো ফেসবুকের অনেকের প্রোফাইল ফটোতে রাখা জাতীয় পতাকার ছবিও নিষিদ্ধ করে দিতে হয়। সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে চলা আর ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়ার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বললে আমি ভালোবেসে কাছেই টেনে নিতে চাইবো। পাড়ার মুরব্বী খালাম্মাদের আমি সন্মান দেখিয়ে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে দুরত্ব বজায় রেখে চলি। আর পাশের বাড়ীর সুন্দরী প্রেয়সীকে কাছে টেনে নিয়ে চুমু খাই। তুমি খাল্লামা হতে চাও নাকি প্রেয়সী?

খবরঃ দেশের সর্বত্র জামায়াতের নতুন সদস্য সংগ্রহ কমে গেছে, শুধু পাবনায় কমেনি (প্রথম আলো)

হেমায়েতপুর গারদ তো পাবনায়। তাইলে আর সদস্য সংগ্রহ কমবে কেমনে? হেমায়েতপুরের গারদে নিশ্চয়ই এবার তুমুল মাত্রায় জামায়াতের সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলেছে। দৃশ্যকল্পটা হতে পারে এরকমঃ
জামায়াত কর্মীঃ
  ও মতি মিয়া, তুমি কি জামায়াতের সদস্য হইতে চাও?
মতি পাগলাঃ অবশ্যই হইতে চাই। গারদ থেইকা বার হইয়া আমি ইনশাল্লাহ মাওলানা মনি সিং-এর নেতৃত্বে দেশে ইসলামী বিপ্লব করবো।
জামায়াত কর্মীঃ আলহাদুলিল্লাহ
, তুমি হইলা সদস্য নম্বর ৪২০।

খবরঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের জনৈকা শিক্ষিকাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি  বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। (প্রথম আলো)

সহযোগী অধ্যাপক সাহেব বিভাগীয় সভাপতি হইয়া যাবার পর আর নিশ্চয়ই ক্লাস নিতে পারতেছিলেন না। ছাত্রীর অভাবে তাই ধরছিলেন শিক্ষিকারে। এখন জুনিয়র সহকারী অধ্যাপক হিসাবে জুনিয়র ক্লাসের কচি কচি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকতা করবেন। ধর্ষকের জন্য তো এটা প্রমোশন! আসল প্রশ্ন হলোঃ এই অধ্যাপক মিয়ার চাকরি টিকলো কেমনে? নাকি ১০০ ধর্ষণের মানিক মিয়ার সেঞ্চুরী রেকর্ড দেখার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে  উনার যৌন নিপীড়ন এখন ও কিছু নয়, সবে তো মাত্র রানের খাতা খুললো!

খবরঃ নিঊইয়র্কের এক বাংলাদেশী সম্মেলনে সাবেক যাযাদি সম্পাদক শফিক রেহমান বলেছেন, বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ পুলিশী হেফাজতে আমার গোপনাঙ্গ দেখতে চেয়েছিল। পুরুষ পুলিশ পুরুষের গোপনাঙ্গ দেখে কী আনন্দ পায়? (সাপ্তাহিক আজকাল)

বড়ই যৌক্তিক প্রশ্ন। স্মৃতিভ্রষ্ট হবার কারনে হয়তো শফিক রেহমানের আজ এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। কিন্তু এর উত্তর বোধহয় আমি জানি। বছর পনের আগের চালু থাকা এক গল্পের কথা মনে করা দরকার। গল্পটা এমনঃ এক আরব শেখ তাঁর বিলাস বহুল প্রমোদ ভবনে সুন্দরী বিলেতি যুবতীকে নিয়ে মৌজ়মাস্তিতে ব্যস্ত। মৌজ-মাস্তির এক একান্ত ঘনিষ্ট পর্যায়ে আরব শেখের গোপনাঙ্গের বিশাল আকৃতি দেখে বিমোহি্ত বিলেতি ললনা বিস্মিত কন্ঠে বললো, ওয়াওআরব শেখ তখন যুবতীর আরবী গ্রামাটিকেল মিসটেক সংশোধন করে দিয়ে বললেন,  আকৃতিতে এটা ওয়াও নয়, এটা আলিফ যতদুর মনে পড়ে, এই গল্প বাজারে এনেছিলেন শফিক রেহমান নিজেই তার যাযাদি কলামে। শফিক সাহেব হয়তো ভুলে গেছেন, কিন্তু ডিবি পুলিশ এখনো ভুলনি। তারা হয়তো একটু চেক করে দেখতে চেয়েছিল শফিক সাহেবেরটা ওয়াও না আলিফ।

সঙবাদ ১
৬ই আগস্ট, ২০১০
নক্সভিল, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত

৫ আগ, ২০১০

অলক্ষুণে কবিতা

জীবনে কোন না কোন সময় সব মানুষই নাকি একবার হলেও কবি হয়। আমিও হয়েছিলাম। কাঁচাহাতে লেখা কৈশোরের দুর্বল কবিতা, কিন্তু তাতেই আমার জীবন ঝালাপালা। নব্বুই-একানব্বইয়ের দিককার ঘটনা। আমি সবে মাত্র মাধ্যমিকের পাট চুকিয়েছি। মফস্বল শহরে বন্ধুত্বের বৃত্তে চলছে জীবন। বন্ধুদের কেউ নব্য বিপ্লবী --- বামপন্থায় দীক্ষা নিচ্ছে। কেউ বা নব্য কবি --- কাব্য সাধনায় ব্যস্ত। এদের মাঝে বেমানান আমি ক্রীড়ামোদী তরুণ --- খেলাধুলো করে হেসে খেলে জীবন কাটানোর গোপন স্বপ্নে বিভোর। নব্য বিপ্লবী আর নব্য কবি বন্ধুরা তাদের বন্ধুচক্রে এই সৃস্টিহীন ক্রীড়া-প্রেমীর উপদ্রব মেনে নিতে নারাজ। দুই পক্ষের প্রভাবে আমি আধা-বিপ্লবী আর আধা-কবি হয়ে কোন কুক্ষণে যেন লিখে ফেললাম জীবনের প্রথম কবিতা। আর যায় কোথায়? কাঁচা হাতের লিখা এই কবিতাই আলী আবু আম্মুরীর অলক্ষুণে জুতো হয়ে দেখা দিল আমার জীবনে।

সেই সময়ই কোথা থেকে যেন একবার সঞ্জীব চৌধুরী নামে বিপ্লব আর শিল্পের যৌথ-সত্ত্বার এক মানুষ (তিনি তখনো দলছুটের সঞ্জীব হয়ে উঠেননি) এসে হাজির হলেন আমাদের বিপ্লবী আর কবি বন্ধুদের আড্ডায়। বন্ধুরা তাদের কৃতিত্বের গল্প শোনালো: আমার মতো সৃস্টিহীন মানুষও কিভাবে তাদের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সম্প্রতি এক কবিতা ঝেড়ে ফেলেছে। কথায় কথায় সেই কবিতা পড়লো সঞ্জীব চৌধুরীর হাতে, যিনি তা পড়লেন এবং ফেরার সময় পকেটে ভরে নিয়ে চলে গেলেন ঢাকায়। সপ্তাহ খানিক পর জানা গেল ঢাকা থেকে ছাত্র ইউনিয়নের একুশের প্রকাশনা জয়ধ্বনিতে ছাপা হয়েছে আমার সেই অলক্ষুণে কবিতা। বন্ধুরা বলল, “ওরে, ছাড় তোর খেলাধুলা, তুই তো এখন কবি”।

বন্ধুরা হৈ হৈ করে সেই জয়ধ্বনির কপি নিয়ে গেল কলেজ সাময়িকীর দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপকের কাছে। তিনি সেটা আবার ছাপিয়ে দিলেন কলেজ বার্ষিকীতে। সেই কলেজ বার্ষিকী গিয়ে পড়লো কলেজের এক সুদর্শনা মেধাবী তরুণীর হাতে, যে কিনা আবার সেই কবিতা নিয়ে উঠে গেল কলেজের সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আবৃত্তি মঞ্চে। সেই কবিতা এরপর আর কোথাও গিয়ে পড়লো না, বরং আমিই আহ্লাদে গদগদ হয়ে গিয়ে পড়লাম সেই সুদর্শনা মেধাবী তরুণীর প্রেমে। প্রেমে তো পড়লাম, কিন্তু ভীরু মনে প্রেম নিবেদনের সাহস আর হয়ে উঠে না। একবার ভাবলাম কাব্যের ভাষায় বলি। কিন্তু কাব্যের কোলে আশ্রয় মিলল না - বেরুলো না একটি শব্দও। বেরুবে কিভাবে-বন্ধুদের সমতুল্য হবার তাড়া থেকেই না কোন কুক্ষণে লিখেছিলাম সেই একটা মাত্র কবিতা। অতঃপর ভাবলাম এবার না হয় সেই সুদর্শনা মেধাবী তরুণীর সমতুল্য হবার চেষ্টা করে দেখি যদি প্রেম নিবেদনের কোন কুল-কিনারা করা যায়। ব্যস, লাটে উঠলো আমার খেলাধুলা, বিপ্লব, কাব্য সবকিছুই। মন ডুবালাম পড়াশোনায়। তবে প্রেমের মরা যেমন জলে ডুবে না, আমিও ডুবলাম না। বরং ভেসে উঠলাম উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায়। কি প্রেমেই না পড়েছিলাম! আগডুম-বাগডুম করে গিয়ে দাঁড়ালাম সেই মেয়ের সামনে। মনে বড় আশা, এককালীন সাময়িকীতে ছাপা হওয়া আমার কাব্য প্রতিভা আর আজকের পত্রিকায় ছাপা হওয়া আমার কৃতিত্বের ছবি মিলিয়ে আমাতে মুগ্ধ হয়ে সেই মেয়ে নিশ্চয়ই আজ নিজ থেকেই ভালোবাসা-ভালোলাগার গল্প-কথা কিছু বলবে। মেয়ে নিজ থেকেই বলল। ভালোবাসার গল্পই বলল। তবে সে গল্পের নায়ক অন্য কেউ। ভালোবাসার এই গল্পে আমার অবস্থা যেন সেই মক্কাবাসীর মতো যে মক্কায় থেকেও হজ্বের আসর ধরতে পারেনি।

হতাশ হৃদয়। খেলাধুলোয় আর মন বসলো না। ফিরে গেলাম বিপ্লবী বন্ধু আর কবি বন্ধুদের মাঝে কাব্য আর বিপ্লবের সন্ধানে। বন্ধুরা বলল, “ওরে, ছাড় তোর কাব্য আর বিপ্লব, তুই তো এখন মেধাবী”। অবশেষে সেই সিল নিয়েই পড়াশোনার নিরস জগতে মুসাফিরের মতো ঘুরে বেরাতে থাকলাম। আজও সেই পথে পথে ঘোরা সেই হয়নি। বরং এই দুপুর বেলায় কঠিন এক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পড়ার টেবিলে বসে মনে হল- আমার খেলাধুলার সেই আমোদিত জীবন কেড়ে নিলো এক অলক্ষুণে কবিতা। জীবনে ওই একবারই লিখেছিলাম। সেই প্রথম, সেই শেষ। এই সেই অলক্ষুণে কবিতা। শালার এই কবিতার মায়েরে বাপ!

দাবী

বায়ান্নতে
দু’টো দাবী জানালাম বিধাতার কাছে।
প্রথমটি প্রত্যাখ্যান করে বিধাতা বলেন, অপরটি বলো।
বললাম, ভাষা চাই।
বিধাতা ভাষা দিলেন।

একাত্তরে
দু’টো দাবী জানালাম বিধাতার কাছে।
প্রথমটি প্রত্যাখ্যান করে বিধাতা বলেন, অপরটি বলো।
বললাম, স্বাধীনতা চাই।
বিধাতা স্বাধীনতা দিলেন।

নব্বুইতে
দু’টো দাবী জানালাম বিধাতার কাছে।
প্রথমটি প্রত্যাখ্যান করে বিধাতা বলেন, অপরটি বলো।
বললাম, গণতন্ত্র চাই।
বিধাতা গণতন্ত্র দিলেন।

যদিও বিধাতার মেনে নেয়া দাবীগুলোর
ঘটাতে পারিনি বিকাশ
তবুও এক গভীর রাতে
শত যুগের, শত শতাব্দীর প্রত্যাখ্যাত
সেই একটি মাত্র দাবী নিয়ে দাঁড়ালাম বিধাতার কাছে
বললাম, অন্ন চাই, অন্ন চাই, অন্ন চাই।
বিধাতা বলেন,
অন্ন নয়; অন্য কথা বলো।