এই ব্লগটি শিক্ষামূলক। গাড়ী চালনা, চক্ষু নিয়ন্ত্রন এবং ব্রা বিষয়ক সংযম সংক্রান্ত বেশ কিছু শিক্ষনীয়
নীতিবাক্য আপনারা এখানে পাবেন।
আমি তখন আমেরিকার জর্জিয়ায় অজ
পাড়াগাঁর এক সামরিক ঘাটিতে আছি। আমার ইউনিটেই আছে আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত
সেনাসদস্য ডিন ডেভলিন। সিগারেট আর নারীলিপ্সার এক জীবন্ত কিংবদন্তি সে। তার সেই কীর্তিকান্ডের গল্প পরে একদিন করা যাবে। আজ
অন্য গল্প। ডিন ডেভলিনের কাজ তখন এক বিশাল হামভি (হামার গাড়ীর সশস্ত্র সামরিক
ভার্সন) চালিয়ে সেই সেনা ঘাটির পথ ঘাট দাপিয়ে বেড়ানো। এই দেখে আমার শখ হলো সেই
হামভি একবার নিজে চালিয়ে দেখা। আমাকে খুশী রাখতে ডিনের কোন আপত্তি নেই। আমিও আমার
মিলিটারি বসদের বলে কয়ে আমার শখ মেটানোর পার্মিশন নিয়ে নিলাম। ব্যস, এক বিকেলে অফিস শেষ করে ডিনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। ঘটনার সুত্রপাত
এখানেই।
বেশ কিছুদুর হামভি চালিয়ে আমার
আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। চালাচ্ছি আর বনজঙ্গল ঘেরা ঘাটির রাস্তার আশে পাশের
বৈকালিক প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছি। তখন গ্রীষ্মকাল। স্নিগ্ধ বিকেল। হঠাৎ দেখলাম বিকেলের সোনারোদে রাস্তার
পাশের এক সবুজ ঘাসের লনে গোলাপী ব্রা পরিহিতা অর্ধবসনা এক তরুনী আধশোয়া ভঙ্গিতে
সূর্যস্নান করছে। নারীলিপ্সু ডিনের মনে হলো এক্ষুনি গাড়ী থামিয়ে সেই অর্ধবসনাকে
তার জিজ্ঞেস করা উচিত “আমি কি
কোন সাহা্য্য করতে পারি?” আমি
সেই গোলাপী ব্রার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই ভাবছিলাম দুনিয়ায় এতো কিছু থাকতে
ব্যাটা ডিনের কেন মনে হলো যে তার কাছ থেকে সেই তরুনীর কোন সাহায্য প্রয়োজন এবং
অর্ধবসনা হয়ে সূর্যস্নানের সাথে কোন ব্যাটা ছেলের সাহায্য করতে চাওয়ার
সম্পর্কটাই বা কি। হঠাৎ এক ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেলাম। অতি মনযোগের সাথে ব্রা
দেখতে গিয়ে রাস্তার বাঁকটাই খেয়াল করিনি। পনেরো-বিশ ফূট উঁচু এক রোড সাইন
ততক্ষনে আমার হামভির ধাক্কায় পপাত ধরনীতল।
পুলিশ এলো। গাড়ীর তেমন কিছুই
হয়নি। বিশালাকৃতির রোড সাইনের ধ্বংসসাধনই আমাদের ব্রা পর্যবেক্ষনের প্রধান
পরিণতি। ঘটনার আকস্মিকতায় ব্রা, অর্ধবসনা তরুনী, বিকেলের সোনারোদ- সব কিছুই মন থেকে ধুয়ে মুছে গেল। পুলিশ পুলিশের মতো
বিচার বিশ্লেষন করে নির্ধারন করলো এটি একটি প্রশিক্ষণকালীন “সামরিক দুর্ঘটনা”। ব্যস, কেস সেখানেই খতম। আর কোন ঝামেলা
রইলো না। আমরাও স্বস্তিতে বাড়ী ফিরে এলাম। তবে সেই থেকে শিক্ষা হলো গাড়ী চালাতে
গিয়ে ব্রা দেখা মোটেই নিরাপদ কোন কর্ম নয়।
চোর পালালে যেমন
বুদ্ধি বাড়ে, তেমনি দুর্ঘটনার পর তা এড়ানোর যা যা কলাকৌশল
আমার জানা ছিল তা সবই মনে পড়তে থাকলো। বাংলাদেশে গাড়ী চালানোর নির্ভুল কৌশল
সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক ড্রাইভার আমাকে বলেছিল, ব মানেই
বিপদ, তাই ব দেখলেই ব্রেক। এই ব গুলো হলো বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর। অর্থাৎ বাংলাদেশের
রাস্তায় বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও
বাছুর-ই সব বিপদের উৎস। বুড়া, বাচ্চা, বাছুর আর বাজারের আমজনতা গাড়ীর সামনে কখন কি করে বসে তার কোন
গ্যারান্টি নাই। তাই বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর দেখা মাত্রই জলদি ব্রেক কষে গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে
হবে। ব দেখে ব্রেক কষলেই সব মুশকিল আসান। আমি খুব ভালো ভাবে এই তত্ব মুখস্ত
করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ বুঝলাম ড্রাইভার সাহেবের তত্ত্বে বিশাক এক ফাঁক রয়ে
গেছে। ব’তে ব্রা-ও হয়। তিনি যদি বুড়া, বাচ্চা, বাজার ও বাছুর এর সাথে ব্রা বিষয়ক সতর্কবানী যুক্ত করে দিতেন, তাহলে আমি আজ ব্রা দেখেই ব্রেক কষে দিতাম এবং ব্রা দেখতে গিয়ে আমার এই “সামরিক দুর্ঘটনা”ও ঘটতো
না।
ব্রেক কষে না হয় গাড়ীর নিয়ন্ত্রন
হলো,
কিন্তু মনেরর নিয়ন্ত্রনের কি ব্যবস্থা? এই বিষয়েও কিন্তু আমার কিছু জানা ছিল। বাবার বদলীর সুবাদে বছরের
মাঝখানে গিয়ে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছি নতুন এক স্কুলে। নতুন জায়গা, নতুন স্কুল- সব কিছুই অচেনা। ধর্মশিক্ষা ক্লাসে তাই উদাস হয়ে জানালা
দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফেলে আসা স্কুল আর বন্ধুদের কথা ভাবছিলাম। ক্লাসের জানালা
দিয়ে তাকালেই এক বাড়ীর ছাঁদ। কোন কুক্ষনে সেই ছাদে তখন স্নান সেরে ভেজা শরীরে
কাপড় নাড়তে এসেছে এক কাজের বুয়া। খোদার কসম, আমার
সেদিকে মোটেই নজর ছিলনা। আমি শুধু স্মৃতিকাতরতায় উদাস হয়ে জানালা দিয়ে আকাশ
পানে চেয়েছিলাম। কিন্তু ধর্মক্লাসের মৌলভী স্যার
আমার বাহিরের দৃস্টি ও ভেজা শরীরে ছাদে বুয়ার আগমন একসাথে লক্ষ্য করলেন। যার মনে
যেই খেয়াল। তিনি ক্লাস ভর্তি ছেলে মেয়ের সামনে আমার নাম ধরে বললেন, “শোন মাইনুদ্দীন, মনে রাখবা চক্ষুরও জেনা আছে।” । এই নিয়ে সেই স্কুলে বাকী দিনগুলো আমার নানা টিটকারী ও
গঞ্জনার মধ্যে জীবন কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু হায়, তবু মাইনুদ্দীন
সেই কথা মনে রাখে নাই। চক্ষুর জেনা করতে গিয়েই তো আজ এই দশা।
জনকল্যাণের জন্য আমার এই শিক্ষামূলক
অভিজ্ঞতা ব্লগে প্রকাশ করলাম। দেশে বিদেশে যেসব তরুন বন্ধুরা গাড়ী চালান তাদের
জন্য পরামর্শঃ ব দিয়ে বিপদ কিন্তু শুধুমাত্র ৪টি নয়; ব দিয়ে বিপদ ৫টি। বুড়া, বাচ্চা, বাছুর, বাজার এবং ব্রা। আর সব কিছুর পাশাপাশি
ব্রা দেখিলেও সাবধান! গাড়ী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মনের উপরও নিয়ন্ত্রন থাকা চাই।
কিন্তু যৌবনের মন কি আর কথা শোনে? তাই চাই চক্ষুর উপর
নিয়ন্ত্রন। আফসোস, মাইনুদ্দীন মনে রাখে নাই। কিন্তু
আপনারা মনে রাখবেনঃ চক্ষুরও কিন্তু জেনা আছে।
ব্রা মানেই বিপদ
৯ই আগস্ট ২০১০
নক্সভিল, টেনেসি
সচলায়তন ব্লগে প্রথম প্রকাশিত