২ ফেব, ২০১৪

মনে মনে মুসলমান

 

বন্ধুবর সাকিব হাসান জীবনানন্দের কবিতার সাথে সাথে একই ভাবধারায় বর্ণিত সুরা বনি ইসরায়েলের একটি আয়াত জুড়ে দিয়ে লিখেছেঃ

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
-জীবনানন্দ দাশ

"হে মানবজাতি তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া" - সুরা বনি ইসরাইল

সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের ছোটবেলার ঘটনা। ১৯০৫-০৬ দিকে তিনি তখন ময়মনসিংহের দরিরামপুর স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তখন ব্রিটিশ আমল। তার শিশুমনে যেমন আছে ইংরেজ বিদ্বেষ, তেমনি আছে সমাজে হিন্দু-আধিপত্যের বিপরীতে মুসলমান হিসাবে নিজের টনটনে আত্ম-পরিচয়। সেই সময় ঢাকা বিভাগের স্কুল ইন্সপেক্টর মিঃ স্টেপলটন স্কুল পরিদর্শনে আসবেন। এই ইংরেজ সাহেবের আগমন উপলক্ষে চারিদিকে সাজ সাজ রব। সাহেব আসার পর দেখে গেল তার সাথী পাগড়ি-আচকান-পায়জামা পরিহিত শুশ্রুমন্ডিত একজন আলেম। বালক আবুল মনসুর ভাবলেন, যেহেতু এই ইংরেজ সাহেব একজন আলেম সাথে নিয়া চলাফেরা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি মনে মনে মুসলমান। ভক্তিতে গদগদ হয়ে তার ইংরেজ-বিদ্বেষ দূর হয়ে গেলো। অবশ্য যখন জানলেন পারলেন সাহেবের সঙ্গী লোকটি আলেম নন, বরং পাগড়ি-আচকান পরিহিত ইংরেজের একজন চাপরাশি মাত্র তখন তার এই ইংরেজ-বিদ্বেষ ফিরে আসতে মোটেও বেশী সময় লাগেনি।

জীবনানন্দের কবিতার সাথে সুরা বনি ইসরায়েলের আয়াতের সাদৃশ্য দেখে আবুল মনসুর আহমেদের সেই গল্পের কথা মনে পড়লো। ভাবছি, জীবনানন্দ নিশ্চয়ই ছিলেন “মনে মনে মুসলমান” !!!

কোন মন্তব্য নেই: