১২ মার্চ, ২০১৩

বাংলাদেশের ৬৩৮



শ্রীলংকার গলে
তে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিশাল মাইল ফলক। 

দ্বিতীয় দিনে চা বিরতির আগ পর্যন্ত ব্যাট করে শ্রীলংকা ৫৭০/৪ রানে ডিক্লেয়ার করে দেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাট শুরু করে। ম্যাচের তৃতীয় দিনে ১৮১ বল খেলে আশরাফুল তার সেঞ্চুরি পূর্ণ করে। চার বছর পর আবারো মোহাম্মদ আশরাফুলের টেস্ট সেঞ্চুরি। ঈদ মোবারক!  অথচ এই আশরাফুল ২৫জনের প্রাথমিক দলেও ছিল না। শেষ মুহূর্তে শাহরিয়ার নাসিফের হাতের তালু ব্লেড দিয়ে কেটে যাওয়ায় আশরাফুল দলে সুযোগ পায়। শালা...রক্ত দেয়া ছাড়া বাংলাদেশে আমরা কিছুই পাইনা।  ভাষায় রক্ত, স্বাধীনতায় রক্ত, গণতন্ত্রে রক্ত......সামান্য ক্রিকেট খেলায় এই যে আশরাফুলের অসাধারণ সেঞ্চুরি, সেটাও শাহরিয়ার নাফিসের হাতচেরা রক্তের বিনিময়ে পাওয়া!

তৃতীয় দিনের চা বিরতির আগে আগে আশরাফুল তার ইনিংসের ৩০০তম বলটি খেলে। টেস্টে ৩০০ বলের টেস্ট ইনিংস খেলার কৃতিত্ব ছিল মাত্র ৩ জন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানেরঃ আমিনুল ইসলাম বুলবুল (৩৮০ বল, ২০০০ সাল), জাভেদ ওমর (৩৫৭ বল, ২০০৩ সাল) ও নাফিস ইকবালের (৩৫৫ বল, ২০০৫ সাল)...আশরাফুল চতুর্থ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসাবে এই দলে নাম লিখালো।

তৃতীয় দিনে চা বিরতির পরে আশরাফুল ১৫৯ রান পূর্ণ করে। টেস্টে কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড হল। এদিন সকালেও বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরের রেকর্ড ছিল ১৫৮... দীর্ঘ ৯ বছরের পুরাতন রেকর্ড। সেটা আশরাফুলের। এদিন সকালেও বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের টেস্ট স্কোরের রেকর্ড ছিল ১২৯.... দীর্ঘ ৬ বছরের পুরাতন রেকর্ড। সেটাও আশরাফুলের। দেশের ক্রিকেটে কত নতুন তারকা পেলাম আমরা। তবু ১২৯ কিংবা ১৫৮ কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ১২৯ নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর আর ১৫৮ নিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর প্রতীক্ষায় থেকেছে বাংলাদেশ। শুধু তুমি আসবে বলে!

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে আশরাফুল ১৮৯ ও মুশফিক ১৫২ রানে অপরাজিত ছিল। চতুর্থ দিনে আমরা প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসাবে প্রথম ডবল সেঞ্চুরিয়ান হিসাবে আশরাফুলকে বরণ করে নেয়ার জন্য প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আশরাফুল আউট হয়ে গেলো ১৯০ রানে। কি মর্মান্তিক! তবে ট্র্যাজেডিই যদি না থাকে
, তাহলে তা আর কি বালের মহাকাব্য? এক মহাকাব্যিক ইনিংসের জন্য আশরাফুলকে অভিনন্দন।

চতুর্থ দিনে মুশফিকের ডবল সেঞ্চুরিসহ ৬৩৮ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক ইনিংসটি ১৯৬ ওভারের। আজ তেরো বছর ধরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে...কত দল কত বার দিনমান বাংলাদেশকে ফিল্ডিং-এ দাঁড় করিয়ে রেখে রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কেউই আমাদের পুরো দুই দিন অর্থাৎ ১৮০ ওভারের বেশী ধরে ফিল্ডিং-এ ফেলে রাখেনি। অথচ সেই আমরাই কিনা আজ সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ১৮০ ওভার ধরে ফিল্ডিং-এ দৌড়া দৌড়ি করিয়েছি। কি অমানবিক! সত্যিই, শোষিতের হাতে রাজদণ্ড বড়ই নির্মম!



কোন মন্তব্য নেই: