২২ জুল, ২০১৩

১৯৭৬-এর রাজনৈতিক দলবিধিতে ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা

১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার এক সপ্তাহ পরই জিয়া দেশে রাজনীতির ময়দান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন।  তাহেরের ফাঁসির ঠিক ৭ দিন পর ২৮শে জুলাই ১৯৭৬ তারিখে জারি করা হল রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬। এই সামরিক আইন বিধির আওতায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ঘরোয়া পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ করে দেয়া হল। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ও অন্য নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের ফলে জাসদ চলে গিয়েছিলো আন্ডারগ্রাউন্ডে। বাকশালে একীভূত হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে মুজিব হত্যা, জেল হত্যা ও মূল নেতৃত্বের কারাবরণ বা আত্মগোপনের ফলে আওয়ামী লীগও তখন নিস্তব্ধ। কিন্তু ১৯৭৬ এর রাজনৈতিক দল বিধির আওতায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ দুটি দলই নতুন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করার উদ্যোগ নিলো। জিয়ার সামনে তখন চ্যালেঞ্জ......নিহত শেখ মুজিবের ইমেজ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ও ফাঁসিতে ঝোলানো তাহেরের স্মৃতি সামনে রাখে জাসদ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ব্যক্তি ইমেজ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য  জিয়া রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬ জারীর মাত্র সাতদিনের মাথাতেই এই বিধিতে  এক অভিনব সংশোধনী নিয়ে আসলেন। ৪ঠা আগস্ট ১৯৭৬ তারিখে রাজনৈতিক দল বিধি (সংশোধিত সামরিক আইন নং ২৫ ) জারী করে বলা হল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তিপূজা প্রকাশ করা হলে তা আইনবর্হিভূত বলে গণ্য হবে। ১৯৭৮ সালের মধ্যেই জিয়া নিজে দেশব্যাপী ব্যাপক ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। জিয়ার নিজের ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের সুযোগ এসে যাওয়ায় বিএনপি গঠনের প্রাক্কালে ১৯৭৮ সালের ১লা মে জিয়া সমস্ত সংশোধনী-সমেত রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।



রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহারের উপর ১৯৭৬ এর রাজনৈতিক দল-বিধির সেই নিষেধাজ্ঞা টিকিয়ে রাখা ও তার বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আজ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনীতির ধরণ কি হতো সে এক কৌতুহলউদ্দীপক প্রশ্ন বটে!   

কোন মন্তব্য নেই: