২০ জুল, ২০১৩

অযোগ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য

পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে কিংবা পালিয়ে গিয়ে যেসব বাঙ্গালী সেনাসদস্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তারা সকলেই সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের শপথ বরখেলাপ করেছেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে তারা যতই বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দিক না কেন, স্বাধীনতার পরে তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকুরীতে ফিরিয়ে আনা ঠিক হয়নি। কারণ শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের শপথ ভঙ্গের দায়ে এই সকল মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের অযোগ্য হয়ে গেছেন।


গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রন্থে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন মওদুদ আহমেদ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে আনুগত্য বজায় না রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কারণে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফিরে আসার অযোগ্য। তার মানে কি এই যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে বাঙ্গালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে তারা সেনাবাহিনীতে ফিরে আসার যোগ্য থাকতেন?

গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ বইয়ের পৃষ্ঠা ১০-এ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে নানা বিশৃঙ্খলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মওদুদ আহমেদ লিখেছেন:

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যে সমস্ত ব্যাটালিয়ন স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল কেন্দ্রগুলো গঠন করে তারা সবাই ছিল মূলত পলাতক। সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবার সময় আনুগত্যের একটি শপথ নিলেও তারা সেই শপথ ভেঙ্গে মূল সেনাবাহিনীর কমান্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছিল। যুদ্ধকালে যত বীরত্ব ও সাহসিকতাই তারা প্রদর্শন করে থাকুক না কেন, অপর একটি সুশৃঙ্খল চিরায়ত সেনাবাহিনীর সদস্য হবার জন্য আনুগত্যের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, সে যোগ্যতা হারিয়ে ফেলায় ইতোমধ্যেই তারা হয়ে পড়েছিলো অযোগ্য। বীরত্ব ও ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের বেসামরিক প্রশাসন, এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও অঙ্গীভূত করা যেতো, কিন্তু কোনভাবেই তাদের সুশৃঙ্খল একটি সেনাবাহিনীর ধাপক্রমিক পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা উচিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

কোন মন্তব্য নেই: